Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রিজার্ভ আবারও ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

[publishpress_authors_box]

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আবারও ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল।

আকুর দেনা শোধের আগে ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ পর ১৫ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

পরের সপ্তাহে (২২ জানুয়ারি) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

২৯ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। গ্রস হিসাবে ২৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

প্রায় তিন বছর ধরে রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে যায়। কমতে থাকে রিজার্ভ।

আমদানি ব্যয় কমায় এবং রেমিটেন্স বাড়ায় ২০২১ সালের আগস্টে বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গ্রস হিসাবে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল রিজার্ভ।

গত ১১ নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল; গ্রস হিসাবে নেমেছিল ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।

এরপর রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় অর্থনীতির এই সূচক বাড়তে থাকে।

এছাড়া আইএমএফের চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় করার শর্ত হিসেবে চলতি ডিসেম্বর শেষে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনার কারণেও রিজার্ভ বাড়তে থাকে।

গত ২৪ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ওই দিন গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

এরপর ২৯ ডিসেম্বর এশীয় উন্নয়ন তহবিলের (এডিবি) ৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ যোগ হওয়ায় রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

৮ জানুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ আরও বেড়ে ২১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে ওঠে; গ্রস হিসাবে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

৯ জানুয়ারি আকুর দেড় বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে।

এক বছর আগে গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩ সালের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথা মতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে গ্রস হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এর আগে কেবল গ্রস হিসাবের তথ্যই প্রকাশ করা হতো।

এখন বিপিএম-৬ ও গ্রস হিসাবের পাশাপাশি রিজার্ভের নিট বা প্রকৃত হিসাবও করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সেটি প্রকাশ করা হয় না। কেবল আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

নিট রিজার্ভ হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার মোট সঞ্চিতি থেকে সব ধরনের দায়দেনা বাদ দেওয়ার পর যা থাকে সেটা। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে গ্রস হিসাবের রিজার্ভের চেয়ে নিট রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো কম থাকে। আর বিপিএম-৬ হিসাবের চেয়ে কম থাকে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।

সে হিসাবে বাংলাদেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।

সবশেষ গত ডিসেম্বর মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে ২০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।

আকু হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।

অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।

রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছিল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলেছে, এই সাত মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত