শ্রীলঙ্কার জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড এতটাই পুরনো যে একটি বানরই এত বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে!
রবিবার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে শ্রীলঙ্কা অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার পর দেশটির সংবাদপত্র ডেইলি মিরর তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামই করেছে এই রকম।
মহামারির পর খাবি খাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অনেকটা সফল হলেও শ্রীলঙ্কার যে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, বিদ্যুৎ বিপর্যয় তাই মেলে ধরেছে।
প্রকৌশলীরা বলছেন, দীর্ঘদিনের পুরনো বিদ্যুৎ গ্রিড যে বাতিলের পর্যায়ে চলে গেছে, সে বিষয়ে সরকারকে বছরের পর বছর ধরে জানানো হলেও কেউ কান দেয়নি।
শ্রীলঙ্কা সরকার এরই মধ্যে পুরো ঘটনার জরুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ডেইলি মিরর জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পান্দুরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুই দল বানরের মারামারির ঘটনাকে সামনে রেখেই চলছে তদন্ত।
শ্রীলঙ্কার বিদ্যুতের একটি অংশ সৌর শক্তি থেকে এলেও সোলার প্যানেলগুলো জাতীয় গ্রিড যুক্ত নয়। বলা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ায় মনোযোগ দিলেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মতো আরও কিছু যে জং ধরা অবস্থায় রয়েছে, সেদিনে নজর দিচ্ছেন না।
কোভিড মহামারিতে ২০২২ সালে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি; তার জেরে রাজনীতিতে নামে সঙ্কট। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে বাঁচে রাজাপাকসে পরিবার।
তারপর গত বছরই নির্বাচনে বামপন্থি অনুঢ়া কুমারা দেসানায়েকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজটি অনেকটা গুছিয়ে এনেছেন, তখনই ঘটল বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা।
বিবিসি জানিয়েছে, সোয়া দুই কোটি মানুষের এই দেশ রবিবার জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল। তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ফিরে আসছে। বিশেষ করে হাসপাতাল ও পানি শোধনাগারগুলোতে আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী কুমারা জয়াকোডি সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় গ্রিডে একটি ট্রান্সফর্মারের সংস্পর্শে চলে এসেছিল একটি বানর। তাতেই পুরো সিস্টেমে জটিলতা দেখা দেয়।”
রবিবার সকাল ১১টার দিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। তবে কয়েক ঘণ্টা পরই ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ফিরে আসা শুরু হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় চলছে সরস আলোচনা। তাতে কটাক্ষ করা হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের।
একজন লিখেছেন- “একটি দুর্বৃত্ত বানর শ্রীলঙ্কার গোটা বিদ্যুৎ গ্রিড উড়িয়ে দিল!” আরেকজন লিখেছেন- “একটি বানর=মহাবিপর্যয়, এখন সময় এসেছে অবকাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবার।”
ডেইলি মিরর জানিয়েছে, বিপর্যয়ের পর সরকার জরুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।