মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ প্রশাসক বদিউজ্জামান দিদারের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তিনি মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বরে ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ প্রতিবাদ সভা আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রোকনুজ্জামানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আনিসুর রহমান, সবুজ দলের সংগঠন সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান আকন, ভুক্তভোগী কর্মকর্তা বদিউজ্জামান দিদার, অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, জিয়া পরিষদের প্রেসিডেন্ট আব্দুল কুদ্দুস।
সভায় বক্তারা বদিউজ্জামান দিদারের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ’ আখ্যায়িত করে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ঢাকার বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল এক প্রতিবাদলিপিতে জানায়, মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার গত ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকালে অফিস থেকে ফেরার পথে বনানী এলাকায় কিছু দুর্বৃত্তের দ্বারা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে আহত হন। হামলায় তাকে বহনকারী গাড়িটি ভাঙচুর করা হয় এবং তার ড্রাইভারও আহত হন।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল হামলায় জড়িত সবার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়।
গণআন্দোলনের মুখে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ২১ অগাস্ট নগদ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আগের পর্ষদ ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামান দিদারকে প্রশাসক নিয়োগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঘটনার দিন সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম নগদে অভিযান পরিচালনা করে। তখন নগদের প্রশাসক দিদার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে নগদে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাচার ও ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি সংক্রান্ত অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদক টিম এ সংক্রান্ত নথি-পত্র সংগ্রহ করেছে এবং তারা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখবে।
এর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই নগদের সাবেক সিইও তানভীর মিশুকের কাছ থেকে হুমকি পেয়ে গত সেপ্টেম্বরে নিরাপত্তা চেয়ে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন দিদার।
বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান বক্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় নগদে দুর্নীতি ও লুটপাট চলেছে।
“বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসক কঠোর পরিশ্রম করে সেই দুর্নীতির মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, আর এ কারণেই তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।”
সবুজ দলের সভাপতি মিজানুর রহমান আকন বলেন, “নগদের দুর্নীতি তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনা কোনও ব্যক্তিবিশেষের ওপর হামলা নয়, বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ।”
সভায় জিয়া পরিষদের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বাংলাদেশ ব্যাংকের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্টে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানান।
তিনি বলেন, “যেসব কর্মকর্তা ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের জন্য ঝুঁকিভাতা চালু করতে হবে এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।”
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছিলেন জানিয়ে ভুক্তভোগী বদিউজ্জামান দিদার বলেন, “বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও শুধু সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগকে জানালেও তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি, যার ফলে আমি হামলার শিকার হয়েছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”