ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, তিনি প্রত্যাশা করেন এখন ভারত সরকার তাকে দ্রুত বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেবে।
তিনি বলেন, “স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দেশে এনে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
এর আগে যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
এই বৈঠকের বিস্তারিতও সাংবাদিকদের জানান মির্জা ফখরুল।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রতিবেদনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “পর্যবেক্ষণ কমিটি সঠিকভাবে বলেছেন যে, একজন ব্যক্তি বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সমস্ত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, গণহত্যা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধবংস, সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দেওয়া, সবকিছুই রিপোর্টে এসেছে। প্রমাণ হয়ে গেছে গণহত্যার নির্দেশদাতা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।”
শেখ হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট তা প্রমাণ হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সুতারং আমাদের প্রত্যাশা, শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে, ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেবে। তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এমনকি তার সহযোগী যারা ছিলো তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”
বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশে স্বস্তি প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি যে, সত্য সব ঘটনা এখানে উদঘটন হয়েছে। তবে সমস্যাটা হচ্ছে, জাতিসংঘ যখন বলে তখন আমরা সেগুলো সবাই বিশ্বাস করি, যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না।”
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “শেখ হাসিনার শাসনামলে দেখানো হয়েছে, একেকটা বাড়িতে জঙ্গির টেনিং হচ্ছে, পড়া-শোনা হচ্ছে, জঙ্গিবাদ তৈরি করা হচ্ছে, বোম তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু আজকে প্রমাণিত হয়ে গেলো যে, আমরা যে কথাগুলো বলেছি সেগুলোই সত্যি। আওয়ামী লীগ তাদের সরকার ওই সময় অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা বিরোধী দলকে ধ্বংস করেছে।”
বিএনপি নির্বাহী আদেশে কোনও দল নিষিদ্ধের পক্ষে কি না? জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, “এই বিষয়টা তো পরিষ্কার করে বলেছি, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।”
নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ঘোরবিরোধী, অত্যন্ত জোরালোভাবে বিরোধী। আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কোনও ব্যবস্থাকে আমরা সমর্থন করবো না। কারণ এখানকার মানুষ এটাতে অভ্যস্ত না।”
যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যানের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকের এই বৈঠকটা পূর্বে নির্ধারিত ছিলো। আমাদের মধ্যে রুটিন আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থা, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন সেগুলো সম্পর্ক এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে প্রভৃতি বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন।”
বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে তারেক রহমানের একটি বৈঠক আজই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।