শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের অভ্যুত্থানে একসঙ্গে থাকলেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দূরত্ব এখন দিনদিনই বাড়ছে; আর তাতে উত্তেজনার পারদ চড়াল খুলনার কুয়েটের সংঘর্ষ।
মঙ্গলবার ওই সংঘর্ষের পর বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হচ্ছে। শিবিরকে ‘গুপ্ত’ সংগঠন বলে প্রতিরোধের আওয়াজও তুলেছেন ছাত্রদলের নেতারা।
অন্যদিকে ছাত্রশিবির অভিযোগ অস্বীকারের পাশাপাশি ছাত্রদলের আচরণকে ছাত্রলীগের সঙ্গে তুলনা করে ‘নব্য ফ্যাসিস্ট’দের ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও কুয়েটের ঘটনার জন্য ছাত্রদলকেই দায়ী করছে। হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে তারা।
এদিকে অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মধ্যে মারামারি দেখে দৃশ্যত হতাশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সবাইকে সতর্ক করেছেন যে এই বিরোধের সুযোগ নিতে পারে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাইয়ে যে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে, তাতে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সহযোগী সব সংগঠনের অংশগ্রহণ ছিল।
তবে অভ্যুত্থানের পরে থেকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দুই যুগের জোটে এখনই সবচেয়ে বেশি ফাটল দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা যেমন জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাক আক্রমণ শানাচ্ছেন, বিপরীতে জামায়াত নেতারাও বিএনপিকে দুষতে কম যাচ্ছেন না।
অভ্যুত্থানের পর ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য তৎপরতা শুরুর পর তাতে ছাত্রদলের কাছ থেকে আসছে বিরোধিতা। তারমধ্যেই ঘটল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) মারামারির ঘটনা।
সংঘর্ষ বাধল যে কারণে
অভ্যুত্থানের পর কুয়েটেও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। এরমধ্যেই ছাত্রদল কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে সোমবার ক্যাম্পাসে লিফলেট বিলি করলে তাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল বের করে। মিছিলটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌঁছলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পাল্টা স্লোগান তোলে। এর দুই পক্ষের মধ্যে বাধেথ সংঘর্ষ, যা বিকাল পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।
ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, “গতকাল ছাত্রদলের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রদলের ফরম বিতরণ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমাবেশ ডেকেছিলাম। আমরা উপাচার্যের কাছে একটি আবেদন করার কথা ভেবেছিলাম যে এই ফরম বিতরণের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যেন বহিষ্কার করা হয় এবং ভবিষ্যতে যেন কুয়েটে কেউ কোনও ছাত্র সংগঠন না করতে পারে।
“আমরা আজ যখন উপাচার্যের কাছে যাচ্ছিলাম, তখন আমাদের কুয়েটের ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত, এ রকম কয়েকজন বাইরে থেকে আরও ১৫-২০ জনকে নিয়ে আসে। তারা আমাদের কটূক্তি করতে থাকে এবং আমাদের কয়েকজনকে আক্রমণ করে। এরপর আমরা তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়ে মেইন গেট ও পকেট গেট আটকে দিই। এরপর ছাত্রদলের ছেলেরা পকেট গেটে এসে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে এবং স্লোগান দিতে থাকে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পকেট গেটে জড়ো হই। বাইরে থেকে ছাত্রদলের ছেলেরা এবং স্থানীয় কিছু লোকজন এবং হেলমেট পড়া আরও অনেকে আমাদের ওপর তখন ইটপাটকেল ছোড়ে। রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা আমাদের আক্রমণ করতে আসে। এতে আমাদের অনেকে আহত হয়।”
তবে ছাত্রদলের পক্ষে কুয়েটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল জাবেদ প্রথম আলোকে বলেন, “ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলের সামনে থেকে আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটা ২০-২৫ মিনিট ধরে চলতে থাকে। এরপর আমরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাই।
“বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের সমর্থক যারা আছে, তারা আমাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে এবং বাইরের দোকানদারদের ওপর আক্রমণ করে। বাইরের লোকজন এটা মেনে নিতে পারেনি। এভাবেই ঘটনার সূত্রপাত হয়।”
ছাত্রদল কী বলছে
সংঘর্ষের পরপরই ছাত্রদল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সেখান থেকে ছাত্রশিবিরকে গুপ্ত সংগঠন আখ্যায়িত করে তাদের প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়।
জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রশিবিরের অনেকে সাংগঠনিক পরিচয় লুকিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ আসল পরিচয় আড়াল করে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের পদও নিয়েছিলেন বলে পরে প্রকাশ পায়। মূলত এই বিষয়টি ধরেই ছাত্রশিবিরকে ‘গুপ্ত’ সংগঠন বলছেন ছাত্রদলের নেতারা।
ঢাকায় প্রতিবাদ মিছিলের পর সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গনেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, “আমি গুপ্ত বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে একটি কথাই বলতে চাই। প্রিয় ভাইয়েরা, আপনারা আপনারা গুপ্তবৃত্তির চর্চা থেকে বেরিয়ে আসুন।”
“আমাদের ছাত্রনেতাদের চরিত্র হরণ করার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে গেলে প্রকৃত সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে,” শিবিরকে উদ্দেশ করে বলেন তিনি।
জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে ছাত্রশিবিরকে ‘আল বদর বাহিনী’ও বলেন ছাত্রদল নেতা সাহস।
ছাত্রদলের ফেইসবুক পাতায়ও তার বক্তব্যের এই ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংঘর্ষের আরও ভিডিও পোস্ট করে কিছু প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, “প্রশ্ন, ছাত্রদলের ফর্ম বিতরণের মাঝে কারা এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে ব্যানার তৈরী করে নিয়ে আসল? ছাদে থাকা ৫ জনের পরিচয় খুঁজে বাহির করলে পাওয়া যাবে পরিকল্পিতভাবেই গুপ্ত সংগঠনের পরিকল্পনায় এমন ভয়ংকর সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি হয়।
“কারা এই সংঘর্ষের মাস্টারমাইন্ড, কারা পরিকল্পিত ভাবে ব্যানার তৈরি করে নিয়ে আসল, কারা এলাকার মানুষ ও সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলকর্মীদের উপরে হামলা করেছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, শিবিরের লোকজনই প্রথম সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলা করেছিল। তাহলে শিবিরের এমন গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত নয় কি?”
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েকদিন আগেই জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার নিষিদ্ধ করে ছাত্রলীগকে।
ছাত্রদলের ফেইসবুক পাতায় বিভিন্ন জেলার মিছিলের ছবির ক্যাপশনে ‘গুপ্ত’ সংগঠন শিবিরের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগকেও কুয়েটে হামলার জন্য দায়ী করা হয়।
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সদস্যসচিব তাজিম বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, “ছাত্রশিবির এবং পতিত সরকারের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী এখনো আছে, যাদেরকে আমরা চিনি, তারাই মূলত আমাদের ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের ওপর প্রথমে হামলা করেছে।”
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এরই মধ্যে কুয়েটের ঘটনা সরেজমিন খতিয়ে দেখতে চারজনকে খুলনায় পাঠিয়েছে। তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরো ঘটনা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
পাশাপাশি বুধবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনও ডাকা হয়েছে।
এদিকে কুয়েটে সংঘর্ষের সময় রামদা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের ছবি সোশাল মিডিয়ায় আসার পর তাকে বহিষ্কার করেছে যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।
শিবির কী বলছে
ইসলামী ছাত্রশিবির এক বিবৃতিতে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুনভাবে ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক ধারা তৈরির যে সুযোগ এসেছে, সেই সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করতে একটি দল পুনরায় ক্যাম্পাসে দখলদারি ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে। তারা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর তাদের এই ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন সাংবাদিকদের বলেন, “কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনও সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছেন বলে আমি শুনেছি।”
ছাত্রদল নেতাদের বক্তব্যের জবাবে শিবিরের ফেইসবুক পাতায় এক পোস্টে বলা হয়, “কুয়েটে শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা প্রমাণ করে দিয়েছে কারা সন্ত্রাসী, কারা আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়।
“কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, নিজেদের হামলার জন্য লজ্জিত বা ক্ষমা চাওয়ার বদলে তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। এর চেয়ে হীন, নির্লজ্জ ও স্বৈরাচারী আচরণ আর কী হতে পারে? তারা ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদকেও হার মানিয়েছে।”
ছাত্রদলের নাম উল্লেখ না করে সেই পোস্টে শিবির বলেছে, “তাদের কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর যে পরিমাণ ছাত্রলীগ ক্যাডার খুঁজে পাওয়া যায়, তা প্রমাণ করে তারাই আসল গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রসমাজের কাছে আপনাদের পূর্বতন সকল আমলনামা রয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে কোনও নব্য ফ্যাসিস্টদের সহ্য করা হবে না।”
‘ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান’ জানিয়ে আরেক ফেইসবুক পোস্টে বলা হয়, “ছাত্রদলকে আমরা শত্রু মনে করি না। আমাদের লড়াই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। তাদেরকে সরাসরি কিংবা কৌশলে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি- অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে গঠনমূলক ছাত্র রাজনীতির ধারায় ফিরে আসুন।
“কিন্তু বন্ধুপ্রতিম সংগঠনটি আমাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট ও তাদের শাহবাগী দোসরদের পরামর্শে অগ্রসর হচ্ছেন। যার প্রতিফলন আজ কুয়েটে প্রমাণিত হলো। আজকের ঘটনা আর জুলাই-আগস্টে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?”
“আবারও বলছি, আমরা আপনাদের শত্রু নই। কিন্তু আপনারা হাঁটছেন ঠিক আগের মতো উল্টোপথে। যাদের পরামর্শে অগ্রসর হচ্ছেন, তারা ছাত্রলীগকে যে পরিণতি বরণ করিয়েছে, আপনাদেরও একই পরিণতি করতে ছাড়বে না,” ছাত্রদলের উদ্দেশে বলেছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কী বলছে
মঙ্গলবার সংঘর্ষের পর কুয়েটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি এবং উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানায়। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কুয়েটে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলেও তারা ঘোষণা দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেইসবুকে পোস্টে লিখেছেন, “কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ স্টাইলে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনার পথেই অগ্রসর হলো।”
কুয়েটে হামলার প্রতিবাদে বুধবার সারাদেশে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনীর কর্মসূচি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ভিডিওচিত্রও দেখানো হবে।
কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, “আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিকে তাজা রাখতে চাই। আমরা চাই না, আপামর ছাত্র-জনতা এ অভ্যুত্থান ভুলে যাক। নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটুক, সেটাও চাই না।”
মাহফুজ আলমের আহ্বান
জুলাই অভ্যুত্থানের নেপথ্য নেতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হওয়া মাহফুজ আলম এক ফেইসবুক পোস্টে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভাজন এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
অভ্যুত্থানে সবার অবদান স্বীকার করে তিনি লিখেছেন, “এ অভ্যুত্থান সবার। সেজন্যই মাস্টারমাইন্ড নামক মিডিয়ার তৈরি হাইপকে আমি শুরুতেই প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত যারা নিতাম, তারা প্রায় সকল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অনেক স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেছি। একটা সিদ্ধান্ত ফাইনালাইজ করতে অন্তত ৫/৬ টা গ্রুপের মতামত শুনে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হইছে। ফলে, এটা আসলে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া বডির সামষ্টিক কৌশলগত সক্ষমতা যেমন, তেমনি অনেকগুলো গ্রুপ অব পিপলের অংশগ্রহণ ও পরামর্শের ও ফসল। কেউই অনুল্লেখযোগ্য নন।
“আর, জনগণ তো ১৯-৩৩ জুলাই কারও সিদ্ধান্তের জন্য বসে থাকেনি। তবে, তারা অবশ্যই পাবলিক- প্রাইভেট থেকে শুরু করে মাদ্রাসা- স্কুল- কলেজের ছাত্রদেরকেই লেজিটিমেট নেতৃত্ব হিসাবে মানতেন।”
অভ্যুত্থানকারীদের ‘মধ্যবর্তী অবস্থান’ ধরে রাখার ওপর জোর দিয়ে মাহফুজ লিখেছেন, “সবাইকে নিয়ে এগুতে হবে কিন্তু, Saboteur দের বাদ দিয়ে। Sabotage বা পেছন থেকে ছুরি মারা, অনার কোড না মানার অভ্যাস – এসব যেকোন বন্দোবস্তের জন্য হুমকিস্বরূপ। রাজনীতি মানে Gentlemen’s Agreement ও থাকবে না এটা যারা ভাবেন, তারা নিজেদের শুধরে নিন।”
“ভারসাম্যপূর্ণ, বিভাজন ও ট্যাগিংবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করাটা জনগণের মধ্যকার ঐক্যের জন্য জন্য জরুরি। আমরা জালিম বা মজলুম কোনটাই হতে চাই না। আমাদের শত্রু অগণিত এবং তারা সবাই শক্তিধর। মিত্র খুবই কম। একটু ছাড় দিয়ে যদি আমরা মিত্রতা বাড়াতে পারি এবং শত্রুদের পরাস্ত করতে পারি, তা আখেরে এদেশের জনগণকেই উপকৃত করবে,” বলেছেন তিনি।
মাহফুজ সতর্ক করে বলেছেন, “গণ-অভ্যুত্থানের সকল শক্তির ঐক্যই আমাদের গন্তব্য। একটা হিস্টরিক ব্লক তৈরির সম্ভাবনা আমাদের সামনে ছিল৷ এখনো আছে বটে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ও বাংলাদেশপন্থী জনগোষ্ঠীকে নিজেদের মধ্যেই রাজনৈতিকভাবে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা করতে হবে। কোনভাবেই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনীতিতে স্পেইস দেয়া যাবে না।”