ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তৃতীয় বর্ষপূতিতে জাতিসংঘে উত্থাপিত দুটি প্রস্তাবে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে ২০২২ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের পক্ষ নিলেও তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সে পথে হাঁটছেন না, তা বিশ্বকে স্পষ্টভাবে জানান দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। শুরু হয় যুদ্ধ। তিন বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা এখন রাশিয়ার দখলে।
বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেন ইউরোপীয় কূটনীতিকরা, যেখানে রাশিয়াকে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণের জন্য দায়ী করা হয় এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
প্রস্তাব উত্থাপনের সময় ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়ানা বেতসা বলেন, “আমাদের পুনরায় নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে নিন্দা জানানো উচিত, পুরস্কৃত করা নয়।”
এই প্রস্তাব বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তবে তারা বিরোধিতা করলেও ৯৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে তা সাধারণ পরিষদে পাস হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত এ ধরনের ভোটে অংশ না নিয়ে নিরপেক্ষ থাকে, কিন্তু এবার তারা রাশিয়ার পক্ষালম্বন করে সরাসরি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্য ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরিসহ আরও ১১টি দেশও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। এছাড়া ৬৫টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
এরপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানানো হলেও রাশিয়ার সরাসরি দায় সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
এই দ্বিতীয় প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে পাস হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই মিত্র যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
কারণ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবের ভাষা পরিবর্তন বা সংশোধন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা ভেটো দেওয়া হলে দেশ দুটি শেষ পর্যন্ত ভোট দেয়নি।
বিবিসি জানিয়েছে, ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবটিও পাস হয়, তবে এর আগে প্রস্তাবের ভাষায় পরিবর্তন আনা হয়।
শুরুতে প্রস্তাবটিতে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও ইউক্রেনের প্রতি সরাসরি সমর্থন দেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল না। পরে পরিবর্তিত প্রস্তাবে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনসূচক ভাষা যোগ করা হয়। এই পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
অন্যদিকে ১৫ সদস্যের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবটি কোনও পরিবর্তন ছাড়াই পাস হয়।
এই দ্বিতীয় প্রস্তাব ১০টি দেশের ভোটে অনুমোদন পায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়া ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত দূত ডরোথি ক্যামিল শিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে “ঐতিহাসিক বিবৃতি’ হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “এই প্রস্তাব পেছনের দিকে নয়, সামনের দিকে তাকানোর কথা বলে। এর মূল কথা হলো, যুদ্ধ বন্ধ কর।”