আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার পর নিজের ছাত্র আখতার হোসেন ও নাহিদ ইসলামের রাজনৈতিক দল গঠন করে নতুন যাত্রার সাফল্য কামনা করেছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
নাহিদ ও আখতারের নেতৃত্বে শুক্রবার নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশের ঠিক আগে ফেইসবুকে তাদের নিয়ে লিখেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলর সরাসরি ছাত্র ছিলেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার। আখতারের জুনিয়র নাহিদও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
আখতার এক সময় নুরুল হক নুরের ছাত্র অধিকার পরিষদ করতেন, ডাকসুতে নির্বাচিতও হয়েছিলেন সেই সংগঠন থেকে। পরে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি নামে নতুন একটি ছাত্র সংগঠন গঠন করেন।
এই সংগঠনের নেতারাই ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তোলেন। রক্তাক্ত সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
আসিফ নজরুল লিখেছেন, “২০২৪ এর ভূয়া নির্বাচনের পর খুব মন খারাপ করে থাকতাম। এমন সময় আখতার একদিন আইন বিভাগে এল। বলে কয়ে আমি তাকে বাড়ি থেকে ঢাকায় আনিয়ে মাস্টার্স শেষ করতে রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার কোনও লক্ষণ নাই তারমধ্যে।
“আমার গাড়ি থামিয়ে সে সালাম দিল। তারপর বেশ কিছুক্ষন কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি বিরক্ত হলাম। আরও বিরক্ত হলাম যখন সে বলল- নুর-রাশেদদের দল ত্যাগ করে নতুন সংগঠন করবে! আমি বললাম, আবার নতুন দল! আর কতবার মার খেতে চাও তুমি!
“সে মাথা নিচু করে মৃদু হাসতে থাকে। এই অদ্ভূত হাসির কোনও মানে খুঁজে পেলাম না। বেশি কথা না বলে বাসায় চলে এলাম। কয়েকদিন পর ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে তার রক্তাক্ত ছবি দেখে দুঃখ আর হতাশায় বুক বিদীর্ণ হলো। সে কি বুঝতে পারছে না কিছু হবে না আর এসব করে!”
“বুঝতে আমি-ই পারিনি। নতুন সংগঠন করার কয়েকমাসের মাথায় তারা এক অসম্ভবকে সম্ভব করল। প্রবল প্রতাপশালী আর নির্মম ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাল,” লিখেছেন আসিফ।
“আখতারের সংগঠনের নাহিদ হয়ে উঠলো এই গণঅভূত্থানের প্রধান নেতা। উত্তাল জুলাই-এ আমার এবং আমার মতো লক্ষ মানুষের নেতা!”
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, তাতে আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন আসিফ। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা নাহিদও উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিতে সম্প্রতি উপদেষ্টার পদ ছেড়েছেন তিনি।
নাহিদের সঙ্গে এক সরকারে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন আসিফ নজরুল।
“কতবার যে সে আমাকে বিস্মিত করল তার যোগ্যতা, বাকসংযম, ব্যক্তিত্ব আর অকল্পনীয় ম্যাচিউরিটি দিয়ে! নাহিদ থাকে আমার পাশের বাসায়। সে সরকার থেকে পদত্যাগ করার দিন গভীর রাতে তার সবুজ লনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ। মায়া বড় বিচিত্র বিষয়!”
অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে নতুন যে দল গঠিত হয়েছে তার আহ্বায়কের দায়িত্ব নিচ্ছেন নাহিদ, সদস্য সচিব হচ্ছেন আখতার। আখতার যখন ছাত্র শক্তি গঠন করেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন সেই সংগঠনের আহ্বায়কের পদে, নাহিদ ছিলেন সদস্য সচিব।
তাদের নতুন দলের সাফল্য কামনা করে আসিফ নজরুল লিখেছেন, “আজ নাহিদ আর আখতার শুরু করছে নতুন যাত্রা। জুলাই গণঅভূত্থানের ছাত্র-তারুণ্যের প্রত্যাশা পুরণে শুরু হলো তাদের নতুন দলের অভিযাত্রা। জাতীয় নাগরিক পার্টির সবার জন্য অনেক দোয়া, শুভকামনা।”