ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল ও হাতাহাতির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেইসবুকে, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সারজিস আলমও ছিলেন।
বুধবার রাতে বিভিন্ন জনের ওয়ালে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে কেউ কেউ বলছেন, বসুন্ধরায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হেনস্থা হয়েছেন সারজিস।
বৈষম্যবিরোধীদের নতুন ছাত্র সংগঠন ও নতুন দলে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ ছিল। তার মধ্যেই এই ঘটনাটি ঘটে বুধবার সন্ধ্যায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর ফটকে।
ঘটনার ব্যাখ্যায় সারজিস বলছেন, ছাত্রদলের একটি অংশ তাকে বিব্রত করতে চাইছিল। তিনি তখন চলে আসেন। পরে শোনেন যে সেখানে হাতাহাতি হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে এখন বিএনপি ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নানা বিষয়ে মতভেদ দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি খুলনার কুয়েটে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারিও বাধে।
এদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বেসরকারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।
সারজিসের বর্ণনায় ঘটনা
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন, বুধবার ইফতারের পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা দিতে এবং তাদের কথা শুনতে গিয়েছিলেন তিনি।
“সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের সাথে গল্প-আড্ডা হয়, তাদের কথা শোনা হয়, চায়ের আড্ডা হয়।
NSU, IUB, AIUB, UIU এই ৪ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক সহযোদ্ধাদের সাথে আড্ডা দিয়ে NSU’র সামনে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম ৷ আমার সাথে ১৫-২০ জন প্রাইভেটের সহযোদ্ধারা ছিল। পরে NSU’র গেটের সামনে দেখি ১০-১২ জন ঢাবি সিন্ডিকেট নিয়ে স্লোগান দিচ্ছে।”
তার মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ শাকিল ছিলেন জানিয়ে সারজিস লিখেছেন, “আমি এগিয়ে যাই তাদের কথা শুনতে ৷ কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার সাথে থাকা প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদেরকে গালিগালাজ করতে থাকে।
“ওদের ১০-১২জনের মধ্যে ১-২জনকে স্টুডেন্ট মনে হলেও বাকিদের দেখে ভাড়া করা টোকাই দুষ্কৃতিকারী মনে হচ্ছিলো৷ বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই এদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আমি দুই পক্ষকে চলে যেতে বলি এবং চলে আসি।”
এরপর সেখানে হামলার খবর পান জানিয়ে সারজিস লিখেছেন, “পরবর্তীতে ছাত্রদলের শাকিল তার নেতৃত্বে তার সাথে থাকা টোকাই, দুষ্কৃতিকারী, সন্ত্রাসীদের নিয়ে পূর্বে আমার সাথে থাকা ওই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলেদের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে এবং সরাসরি মাথায় ও পিঠে আঘাত করে একাধিক জনকে রক্তাক্ত করে।”
হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানোর পাশাপাশি ছাত্রদলকে হুঁশিয়ার করে সারজিস বলেছেন, “১৬ বছর ধরে টোকাই লীগের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার পর আজকে যদি ছাত্রদলের কেউ একইভাবে টোকাই লীগের সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করে, তাহলে তারও পরিণতি টোকাই লীগের মতো হতে খুব বেশি দিন লাগবে না।
“শিক্ষা নেন, সময় থাকতে নিকট অতীত থেকে শিক্ষা নেন।”
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে আলোচনা
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ রয়েছে, সেখানে এই ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
এই গ্রুপের আলোচনায় বলা হচ্ছে, ৮ নম্বর গেইটে সারজিস আলমের আসা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে এক পোস্টে বলা হয়, “জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক বসুন্ধরা এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে আসেন। তার আগমনের খবরে নর্থ সাউথের ৮ নম্বর গেইটে জড়ো হয় ছাত্রদল সমর্থকরা।
“দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ঢাবি সিন্ডিকেট ও দল ঘোষণার দিন প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সারজিস আলমকে জেরা করতে থাকেন। এসময় সারজিসের সাথে থাকা একাংশের নেতাকর্মীদের সাথে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে সারজিস আলম দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন।”
এরপর হাতাহাতি থেকে ছুরিকাঘাতের ঘটনাও ঘটে জানিয়ে ওই পোস্টে বলা হয়, “বৈছা সমর্থক মুশতাক তাহমিদকে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুশতাক বর্তমানে আংশকামুক্ত আছেন।”
দুই পক্ষের এই হাতাহাতির ঘটনার সঙ্গে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করা হয় ওই পোস্টে।
একই গ্রুপে আরেক পোস্টে বলা হয়, “নর্থ সাউথের গতকালকের ঘটনার মূল সমস্যা ক্যাম্পাসের গেইটকেন্দ্রিক রাজনৈতিক শোডাউন।
“এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করেছে রাজনৈতিক শোডাউনের কারণেই। যদিও দুই পক্ষই ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ’ ইত্যাদি নানা শব্দ ব্যবহার করেছে।”
তাহমিদকে ছুরিকাঘাতের প্রতিবাদে এক পক্ষ কর্মসূচি দিয়েছে জানিয়ে ওিই পোস্টে বলা হয়, “নর্থ সাউথের ৮ নম্বর গেইট আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহাসিক স্থান হলেও এটা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটা অংশ এবং এখানে মূলত শিক্ষার্থীরা যাওয়া-আসা, গাড়ি-রিকশা থেকে নামা-উঠা/আড্ডার জন্য ব্যবহার করেন। এই স্থানে এই ধরনের রাজনৈতিক বিক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ-ই নষ্ট করবে।”
“গতকাল আমরা দুটি দলের সমর্থকদের মাঝে হাতাহাতিতে ছুরির ব্যবহার দেখেছি, সুতরাং অব্যাহতভাবে রাজনৈতিক পক্ষ হয়ে এধরনের পাল্টাপাল্টি অবস্থান নর্থ সাউথের ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতির কালো থাবাকেই প্রসারিত করবে,” বলা হয় পোস্টে।
থানায় অভিযোগ
মারামারির পর দুই পক্ষই ভাটারা থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সারজিস আলমের অনুসারীরা মধ্যরাতে ভাটারা থানায় গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেন। এরপর ভাটারা থানায় পাল্টা অভিযোগ করে অন্য পক্ষও।
ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, “দুই পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে। দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা, মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”