Beta
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫

রোজায় রেমিটেন্সে ঢল

dollar
[publishpress_authors_box]

রোজার মাসে পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচ মেটাতে বেশি বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ কারণে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ঢল নেমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, নতুন বছরের তৃতীয় মাস এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চের আট দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৮১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

বর্তমান বিনিময় হার (রেমিটেন্স প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে ১০ কোটি ১৮ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।

মাসের বাকি ২৩ দিনে (৯ থেকে ৩১ মার্চ) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ৩১৫ কোটি (৩.১৫ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা হবে একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক মাসে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ সামনে আরও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। আর সেটা যদি হয়, তাহলে মার্চ মাসে রেমিটেন্স সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে আশা করছেন তারা।

এমনিতেই প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সাত মাসেই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটা দেখা যায়নি।

আর এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই অর্থনীতির উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে; বিপিএম-৬ হিসাবে ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৫০ কোটি ডলার; গ্রস হিসাবে বেড়েছে ৪৭ কোটি ডলার।

রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার; টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার।

চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

অর্থ বছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ৭১ লাখ (১৫.৯৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৮৭ লাখ (১৮.৪৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার।

২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল অর্থ বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। চলতি অর্থ বছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) কেবল জুলাই মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের কম রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।

পরের ছয় মাসেই (আগস্ট-জানুয়ারি) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা ছয় মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি।

জুলাইয়ের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনও প্রবাসী আয় আসেনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের; রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সঙ্কট চলছে। কোভিড মহামারির সময়ে আমদানি তলানিতে নামায় একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ব বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সাথে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে।

সঙ্কট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই সূচকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত