সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফার জাদুঘরে একটি সেকশন আছে কার্লোস পাসকুয়ালের জন্য। ‘তুলা’ নামে পরিচিতি আর্জেন্টাইন এই ফুটবল ভক্তের একটি হ্যাট সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে সেখানে। আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকার রঙে বানানো সেই হ্যাটের পাশে আছে ড্রামসের একটি স্টিক।
এই স্টিকটা ব্যবহার করে বেশ কয়েকটা ফুটবল বিশ্বকাপের গ্যালারি মাতিয়েছিলেন তুলা। ৮৩ বছর বয়সী তুলা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির আগে একবার যেতে চেয়েছিলেন সেই জাদুঘরে। কিন্তু ইচ্ছেটা পূরণ হল না। কাল (বুধবার) না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন আর্জেন্টিনার সেরা ভক্ত হিসেবে খ্যাত তুলা।
১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখে আসছেন তিনি। ২০২২ পর্যন্ত দেখেছেন ১৩টি বিশ্বকাপ। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের অফিশিয়াল গানের ভিডিওতেও ছিলেন তুলা।
২০২৬ সালের ১৪তম বিশ্বকাপটা দেখা হলো না আর। বুয়েনস এইরেসে মিতের সানাতোরিয়ামে গত ৩১ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার করান তুলা। এরপর চলে গিয়েছিলেন কোমায়। তার পরিবার সবাইকে প্রার্থনা করতে বললেও কাজ হলো না কিছুতে। ৮৩ বছর বয়সে মারা গেলেন মেসির শহর রোজারিওতে জন্ম নেওয়া তুলা।
২০২২ সালে ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কারে ‘বেস্ট ফ্যান অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিলেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। সমর্থকদের পক্ষ থেকে সেটা নিতে গিয়েছিলেন তুলা। স্প্যানিশ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা না জানা তুলা ফিফার মঞ্চ মাতিয়েছিলেন ড্রাম বাজিয়ে।
মোটেও উচ্চবিত্ত নন তুলা। তবে বিশ্বকাপে কোনও না কোনও ভাবে পৌঁছে যেতেন বিভিন্ন দেশে। এজন্য বিমান, নৌকা, উড়োজাহাজ, ট্রেন-চড়েছেন সব বাহনে। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার স্মৃতি আর্জেন্টাইন দৈনিক ক্লারিনকে তুলা বলেছিলেন এভাবে, ‘প্রথমে মাদ্রিদে যাই। এরপর ফ্রান্সের সীমান্ত পার হয়ে জার্মানিতে ঢুকেছিলাম। এ পথে অন্যের গাড়িতে যাত্রী হয়ে আর কখনও লুকিয়ে জাহাজে উঠেও গিয়েছি।’’
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে তোলা ছবি দেখিয়েও ভ্রমণের খরচ মিটিয়েছেন তুলা। গত বিশ্বকাপের আগে ক্লারিনকে বলেছিলেন, ‘‘টাকা নেই। কাতারের ভাষাও জানি না। তবে আমি জানি সৃষ্টিকর্তা পাশে আছেন। এর আগে ১২টি বিশ্বকাপে ছিলাম টাকাপয়সা ছাড়াই। সমর্থন দেওয়ার মতো কাউকে না কাউকে পেয়ে গেছি সব সময়। এমনকি ২০১৮ সালে এক রাশিয়ান আমাকে সাহায্য করেছিলেন।’’
শেষ পর্যন্ত কাতার ঠিকই পৌঁছে গিয়েছিলেন তুলা, যা ছিল তার ১৩তম বিশ্বকাপ। ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিতভাবে মিস করবে বর্ণময় এই আর্জেন্টাইন ভক্তকে।