বনানীর কামাল আতাতুর্ক পার্কে রাত ১০টায়ও দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। ব্যস্ততম সড়কের পাশে অবস্থিত পার্কের মাঝখানে বসানো হয় বিশাল আকারের বক্সিং রিং। যেখানে শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে পেশাদার বক্সিংয়ের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা-পাথ টু গ্লোরি হাসল ইন ঢাকা স্কয়ার।
প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমার লড়াই। রাতের শেষ ইভেন্টের লড়াইয়ে সুর কৃষ্ণ হারিয়ে দেন ভারতীয় বক্সার সন্দ্বীপ কুমারকে।
৮ রাউন্ডের লাইটওয়েট ক্যাটাগরিতে সুর কৃষ্ণ হারিয়েছেন ভারতের শক্তিশালী বক্সারকে। লড়াই শেষ হতেই জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে নেন সুর কৃষ্ণ। মঞ্চে উঠে তাকে অভিনন্দন জানান বাংলাদেশের প্রো বক্সিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি আদনান হারুন।
গত জানুয়ারি মাসে ব্যাংককে জিতেছেন সুর কৃষ্ণ। এর আগে ভুগেছিলেন ডেঙ্গুতে। অসুস্থ থেকে উঠে টানা দুটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। শনিবারের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে তাই উচ্ছ্বসিত রাঙামাটির এই বক্সার, “এই ম্যাচ জেতার কারণে আমার সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।”
নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস তো ছিলই। সঙ্গে অনুশীলনটাও কঠোরভাবে করেছিলেন সুর কৃষ্ণ। যে কারণে এমন জয় এসেছে বলে জানালেন, “এই প্রতিযোগিতার জন্য অনেক অনুশীলন করেছি। কিন্তু প্রতিপক্ষ বক্সার যে এত কঠিন হবে, এত প্রস্তুতি নিয়ে আসবে সেটা জানা ছিল না। ভেবেছিলাম আহামরি বক্সার। কিন্তু সে কঠিন প্রতিপক্ষ।”
পেশাদার টুর্নামেন্টে পরপর লড়াই করাও অনেক কঠিন। সেটাও বললেন তিনি, “১৫ দিন আগেই লড়াই করে আবারও রিংয়ে নামা সহজ কাজ না। এসব ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২-৩ মাস বিশ্রাম নিতে হয় পেশাদার বক্সিংয়ে। কিন্তু সেই সুযোগ পাইনি। শুধু ভালো সুযোগের জন্য এই লড়াইয়ে নেমেছি আমি।”
যে কোনও খেলায় ভারতীয় প্রতিপক্ষকে হারানোর জিদ কাজ করে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের। বক্সিংয়ের রিংয়ে সুর কৃষ্ণও তাই এই জয়ে খুশি, ‘শুধু ভারতীয় না যে কোনও বক্সারকে হারানোতেই আনন্দ রয়েছে। নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা সব সময়ই গর্বের আমার জন্য।”
৮ রাউন্ডে জেতার কারণে এবার ১০ রাউন্ডের লড়াইয়ে নামতে পারবেন সুর কৃষ্ণ। এবার লক্ষ্য সেটাই, জানালেন তিনি, “খেতাবের লড়াইয়ের জন্য লড়তে পারব এবার। সামনেই ডব্লিউবিসি (ওয়ার্ল্ড বক্সিং কাউন্সিল) চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। যে লড়াইয়ে খেলেছেন মোহাম্মদ আলী, মাইক টাইসনের মতো বক্সাররা। এবার আমি সেই প্রতিযোগিতায় খেলতে পারব। এটা শুধু আমার জন্য না পুরো বাংলাদেশের জন্যই ইতিহাস। বিশাল বড় অর্জন বাংলাদেশের জন্য।”
এর আগে ওয়েলটার ওয়েট ক্যাটাগরিতে খেলেন বাংলাদেশের আল আমিন ও মোকসেদুল রানা। এই ক্যাটাগরিতে সহজেই জিতেছেন আল আমিন। তবে ৬ রাউন্ডের খেলায় ফেদারওয়েট ক্যাটাগরিতে মালয়েশিয়ার ডাইলোনিয়েল ম্যাকডিলোনের সঙ্গে ড্র করেন বাংলাদেশের রিসাতুল মাহমুদ সাজিন।