রাশিয়ায় কারাবন্দি অবস্থায় মারা যাওয়া দেশটির বিরোধী দলের নেতা ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনির মরদেহ ‘লুকিয়ে রাখার’ অভিযোগ উঠেছে।
নাভালনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিরা ইয়ারমিশ বলছেন, আর্কটিক কারাগারে মৃত্যুর একদিন পরেও ছেলের মৃতদেহ বুঝে পাননি তার মা লিউডমিলা নাভালনায়া।
কিরা বিবিসিকে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ নাভালনির মাকে জানিয়েছিল, ময়নাতদন্ত শেষ হলেই মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। তবে এখন কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, আরেকবার নাভালনির মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে হবে।
নাভালনির মিত্রদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে নাভালনির মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না। মরদেহ ফেরত না দিয়ে দেশটির প্রশাসন আলামত গায়েব করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।
উগ্রপন্থী সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও এতে অর্থায়ন, জালিয়াতি, আদালত অবমাননাসহ নানা অভিযোগে ৩০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল নাভালনিকে। যদিও তিনি জীবিত অবস্থায় এসব অভিযোগকে বরাবরই ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেছিলেন।
কারা কর্তৃপক্ষ শুক্রবার নাভালনির মা লিউডমিলা নাভালনায়াকে জানান, তার ছেলে কারাগারের ভেতর হাঁটাচলার সময় হঠাৎ পড়ে যান এবং জ্ঞান হারান। এরপরেই তার মৃত্যু হয়।
নাভালনির সহযোগী ইয়ারমিশ জানান, কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে পরদিন শনিবার সেখানে যান নাভালনায়া। তাকে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি ধরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে লেখা ছিল শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে নাভালনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নাভালনির আরেক সহযোগী ইভান এসদানোভ জানান, রাজনৈতিক নেতা নাভালনির মাকে বলা হয়েছে, তার ছেলে ‘আকস্মিক মৃত্যু সিনড্রোমে’ মারা গেছেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে এই অস্পষ্ট পরিভাষা তখন ব্যবহার করা হয় যখন কেউ কোনও স্পষ্ট কারণ ছাড়া হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হঠাৎ মারা যান।
মৃত্যুর পর নাভালনিকে কারাগারের পাশে রাশিয়ার সালেখার্দ শহরে নেওয়া হয়েছে বলে তার মাকে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
নাভালনির সহযোগী কিরা ইয়ারমিশ বলেছেন, নাভালনির মা নাভালনায়াকে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের পর বিরোধী দলের নেতার মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে কারাগারের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রাথমিক ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ অস্পষ্ট। এ কারণে নাভালনির মরদেহের ফের ময়নাতদন্তের প্রয়োজন পড়ছে।
কারাগারের কর্মকর্তাদের এই বক্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখছেন নাভালনির সহযোগীরা। তারা মনে করছেন, রাশিয়া কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করে তার মরদেহ পরিবারের কাছে ফেরত দিচ্ছে না, যাতে করে তারা ‘আলামত লুকাতে’ পারে।
নাভালনির মরদেহ দ্রুত তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জোর দাবি জানিয়েছেন তার সহযোগীরা। তাদের বিশ্বাস, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের এই নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
রাশিয়ার বিরোধী দলের নেতার মৃত্যু নিয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি পুতিন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, তারা নাভালনির মৃত্যুর খবর পেয়েছে এবং প্রেসিডেন্টকে তা জানানো হয়েছে।
নাভালনির আকস্মিক মৃত্যুর জন্য রাশিয়া সরকারকে দায়ী করেছে পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা।
পশ্চিমা সাত দেশের রাজনৈতিক জোট জি-৭-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, নাভালনির মৃত্যুর কারণ যেন অতিদ্রুত স্পষ্ট করা হয়।
মৃত্যুর আগে মস্কোর উত্তরে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার দূরে খার্প শহরে ‘মেরু নেকড়ে’ নামের এক বন্দিশিবিরে ছিলেন নাভালনি।
বন্দিশিবিরের নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এটির পরিবেশ কতটা ভয়ঙ্কর। সুমেরুবৃত্তের অনেক ওপরে ইয়ামালো–নেনেটস অঞ্চলে অবস্থিত এই শিবির সমষ্টিগতভাবে শাস্তি দেওয়ার সংস্কৃতির জন্য সুপরিচিত।
শীতকালে ‘মেরু নেকড়ের’ তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। যাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধের অভিযোগ আছে, কেবল তাদেরকেই সেখানে পাঠানো হয়।