Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

হাওরের বোরো নিয়ে এবারও দুশ্চিন্তা 

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় হাওরের বাঁধ সংস্কারের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় হাওরের বাঁধ সংস্কারের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
[publishpress_authors_box]

কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের পিংলার হাওর এলাকার অনেক জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে, কারণ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। বাঁধ নির্মাণকালে একটি পাইপ বসানো হয়েছিল, সেটি কাজ না করায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

আবহাওয়া বিভাগ বলছে, মার্চের শুরুতে আরও বৃষ্টি হতে পারে। আগামী ৩ মার্চ থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন আবহওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে রয়েছে জেলাটির হাওর এলাকার একমাত্র বোরো ফসল, কারণ অনেক স্থানের ফসলরক্ষা বাঁধের সংস্কার ও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি নির্ধারিত সময়ে।

বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি), তবে তা হয়নি। এমনকি কোথাও কোথাও সদ্য শুরু হয়েছে মাটি ফেলা। ফলে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, যেটুকু কাজ শেষ হয়েছে, তার মানও খুব দুর্বল। আর অপ্রয়োজনীয় ও অল্প ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধেও কাজ দেখিয়ে জনগণের টাকা লোপাট করা হচ্ছে।

বাঁধ নির্মাণ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৮৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা বলছেন, কাজ হয়েছে ৫৫-৬০ ভাগ। কৃষকদের শঙ্কা, এর মধ্যে বৃষ্টি হলে বাঁধের মাটি ধসে পড়বে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়বে হাওরের ফসল।  

নির্ধারিত সময়ে কখনও শেষ হয় না বাঁধ সংস্কারের কাজ।

যেভাবে বাঁধ নির্মাণ

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১২টি উপজেলার হাওরে এবার ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণকাজের জন্য ৭৩৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলায় ২৮টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৩১টি, জামালগঞ্জে ৪৪টি, তাহিরপুরে ৮২টি, ধর্মপাশায় ৯৬টি, মধ্যনগরে ৩২টি, শান্তিগঞ্জে ৬৬টি, জগন্নাথপুরে ৩১টি, দিরাইয়ে ১১০টি, শাল্লায় ১৩১টি, দোয়ারাবাজারে ৫১টি ও ছাতক উপজেলায় ৩১টি প্রকল্প।

বাঁধগুলোর মধ্যে ১৬৪টি ক্লোজার (ঝুঁকিপূর্ণ স্থান) আছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।

সুনামগঞ্জের ছোট–বড় ৯৫টি হাওরে প্রতিবছর সোয়া ২ লাখ হেক্টরের মতো জমিতে বোরো আবাদ হয়। এসব হাওরে ১ হাজার ৭১৮ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ আছে। পাউবো ৪০টি হাওরে কাজ করে।

এক সময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ করা হতো। ২০১৭ সালে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে পাউবো নতুন নীতিমালা নিয়ে বাঁধের নির্মাণকাজ থেকে ঠিকাদারদের বাদ দিয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে বাঁধের কাজ করে আসছে।

নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তদারকিতে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে (পওর বিভাগ-১) সদস্যসচিব করে জেলা কমিটি এবং প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সভাপতি ও পাউবোর উপজেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়।  মূলত উপজেলা কমিটি প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করে পাঠায় জেলা কমিটিতে। পরে জেলা কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি পিআইসি থাকে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।

যত অভিযোগ

পিআইসি গঠনে রাজনৈতিক চাপ ও নানা অভিযোগ উঠে প্রতিবছর। এক ব্যক্তিকে একাধিক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তিসহ একই পরিবারের সদস্যদের দিয়ে পিআইসি গঠনেরও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অনিয়মের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানান হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা। 

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর রক্ষা বাঁধ ঘুরে দেখা যায়, ঢিলেঢালাভাবে করা হচ্ছে হাওরের বাঁধের কাজ। অনেক বাঁধে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ বাঁধে লাগানো হয়নি দূর্বা ঘাস। জেলার অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার উন্মুক্ত রয়েছে। অনেক বাঁধে দু’এক দিন আগে শুরু হয়েছে মাটির কাজ। স্লোভ, দুর্মুজের কাজ হয়নি, অনেক ক্লোজার বা ভাঙ্গায় বাঁশ, বস্তা, চাটাই বসানো হয়নি। 

জগন্নাথপুরের পিংলার হাওরের কমপক্ষে ১ হাজার হেক্টর বোরো ফসল বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ফসল রক্ষায় দুইদিন ধরে এক প্রবাসীর অর্থায়নে ১০টি স্যালোমেশিন লাগিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। পাউবোর অপরিকল্পিত ফসলরক্ষা বাঁধের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে কৃষকরা দাবি করেছেন।

কৃষকরা জানান, পিংলার হাওরে এবার ১ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। গত তিন দিনের ভারি বর্ষণে পিংলার হাওরের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির বোরোধান পানিতে তলিয়ে যায়। পিংলার কাড়া বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কোনও সুযোগ না থাকায় বৃষ্টির পানিতে এই ফসল তলিয়ে গেছে।

জগন্নাথপুর পৌরসভার কাউন্সিলর পিংলার হাওরের পিআইসি কমিটির সভাপতি সফিকুল হক বলেন, পিংলার হাওরে কয়েক গ্রামের হাজারো কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছেন। ভারি বৃষ্টিতে অধিকাংশ জমি তলিয়ে গেছে। দুই দিন ধরে জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী এম এ কাদিরের আর্থিক সহযোগিতায় ১০টি স্যালো মেশিন লাগিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধ নির্মাণকালে একটি পাইপ দেওয়া হয়েছিল, সেটি কাজ না করায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, এবারের বাঁধের কাজ অন্য বারের তুলনায় খুব বাজেভাবে করা হচ্ছে। এরকম যদি কাজ করা হয়, তবে এক দিনের বৃষ্টিতেই বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাবে। 

শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরের কৃষক সোবহান মিয়া বলেন, ছাইয়া কিত্তা ক্লোজারের মাটি ধসে গেছে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ না হলে এই হাওরের হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ঝুঁকির মুখে থাকবে। 

শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের কৃষক সুধাকর দাস বলেন, “অপ্রয়োজনীয় ও অল্প ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধেও বিপুল বরাদ্দ দিয়ে সরকারের টাকা লোপাট করা হচ্ছে। তারপরও এখনও অনেক বাঁধে মাটি পড়েনি। ওপরে প্রলেপ দিয়ে পুরনো বাঁধগুলোকে নতুন দেখানোর চেষ্টা চলছে।”  

কার কী বক্তব্য

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, “এখন পর্যন্ত ৮৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। হাওর থেকে পানি ধীরে নামা, জাতীয় নির্বাচনের কারণে সময়মতো কাজ শুরু করা যায়নি।

“অসময়ে বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করা যায়নি। আর সাত দিন সময় বাড়ালে কাজ শেষ করা যাবে। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করব।”

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন বাঁধের কাজ ধীরগতিতে হয়েছে। সেজন্য সময়মতো শেষ হয়নি। তবে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলব।

“অনিয়মের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারার কারণ হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং অসময়ের বৃষ্টিকে অজুহাত হিসেবে দেখছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটি। বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, “পাউবো কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছে, পাউবোর হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই। “ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারগুলোতেও এখনও কাজ শেষ করা যায়নি। তাছাড়া দূর্বা ঘাস লাগানোর জন্য প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও দূর্বা ঘাস লাগানো হয়নি সিংহভাগ প্রকল্পে। তারা (পাউবো) সময় বাড়াতে চাইছে বাড়াক, তবু যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হয়। বাঁধগুলো যেন টেকসই হয়।”

সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, “সুনামগঞ্জের মানুষ একটিমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। সরকার প্রতিবছর বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণের জন্য বিশাল অঙ্কের টাকা দেয়। অথচ এর সদ ব্যবহার হয় না।

“স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের লোকদের পিআইসিতে অন্তর্ভুক্ত করতে যতোটা তৎপর হন, কাজ তদারকিতে ততটা নন। তা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

প্রতিবছর কাজে বিলম্ব

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কাজ শেষ করার কথা। এরপর ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধের কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা।

সুনামগঞ্জে ২০১৭ সালের পর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজের পুরোটাই হচ্ছে স্থানীয়ভাবে কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত পিআইসির মাধ্যমে। তবে কোনও বছরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু এবং শেষ করা যায়নি। কাজের শুরুতে ধীরগতি এবং শেষে তাড়াহুড়া থাকে। এতে ফসল ঝুঁকিতে পড়ে। 

হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, হাওরে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেখা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী ও সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়। আবার নামে-বেনামে পিআইসিতে ঢুকে পড়েন তাদের লোকজন। তারাই মূলত কাজে গাফিলতি করেন। আবার কাজ শুরুতে বিলম্ব হলে সময়মতো কাজ শেষ করা যায় না। এটা প্রায় প্রতিবছর হয়। তাই যথাসময়ে কাজ শুরু ও শেষ করতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে হাওর বাঁচাও আন্দোলন, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল বলেন, “আমরা সব সময়ই বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু এবং শেষের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কাজ শুরুতে দেরি হলে শেষও হয় বিলম্বে। এটা একটা বড় সমস্যা।”

“প্রকল্প গ্রহণ ও পিআইসি গঠনে গণশুনানির কথা থাকলেও মাঠপর্যায়ে প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তারা সেটি যথাযথভাবে অনুসরণ করেন না। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে বাঁধের কাজে অনিয়ম কমে যেত এবং বাঁধও টেকসই হতো” যোগ করেন তিনি।

হওরে বোরো আবাদ

ফসলের যতটা ক্ষতি

আগাম বন্যার হাত থেকে হাওরের ধান রক্ষায় ষাটের দশকে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ। এই বাঁধগুলো নদীর পানি হাওরে ঢুকতে বাধা দেয়। ফলে রক্ষা পায় বোরো ফসল। প্রতি বছরই এসব বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। তবে কোনও কোনও বছর অকাল বন্যায় হাওরের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় কৃষকের সোনালী ফসল।

প্রতি বছরই হাওরপাড়ের কৃষকদের সোনালি ফসল রক্ষায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ। তবে কোনও বছরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয় না।

এবছর বাঁধের কাজ এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা। তিনি বলেন, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় প্রতিবছরই হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতি হয়।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে অকাল বন্যায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের ৬০০ কোটি ২০ লাখ টাকার ধান ভেসে গেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে সাড়ে ৪৪৬ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ৫১ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে ৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ২০২২ সালে ৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ও ২০২৩ সালে ১ কোটি ৬ লাখ টাকার ধান অকাল বন্যায় ভেসে যায়।

এবার বোরো উৎপাদন  

সুনামগঞ্জের হাওরে ডিসেম্বর থেকে চারা রোপন শুরু হয়। ফসল কাটা শুরু হয় এপ্রিলের শুরুতে।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত চারা রোপন হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮২০ টন ধান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, “বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা পাউবোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফসল ভালো হয়েছে।

“বড় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত