বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত সাংবাদিকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ডিএনএ নমুনার তথ্য অনুযায়ী, তার বাবার নাম সবুজ শেখ ওরফে শাবলুল আলম এবং মায়ের নাম বিউটি খাতুন।
রবিবার শাবলুল ও বিউটির ডিএনএ নমুনার সঙ্গে অভিশ্রুতির নমুনা মিলে যাওয়ার তথ্য জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বেইলি রোডে আগুনে নিহতদের মধ্যে বৃষ্টি (অভিশ্রুতি) ও নাজমুলের পরিবারের সদস্যরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন। গত শনিবার তাদের ডিএনএ শনাক্ত হয়েছে। দুজনেরই পরিবারের দেওয়া নমুনার সঙ্গে ডিএনএ মিলেছে।
ডিএনএ শনাক্তের পর তদন্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে উল্লেখ করে ডিআইজি নাহিদুল বলেন, এখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে নিহতদের মধ্যে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকদের পরিচয় নিয়ে এক ধরনের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। ফলে লাশ হস্তান্তরের সময় দেখা দেয় জটিলতা।
কর্মস্থল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হিসেবে পরিচিত হলেও মৃত্যুর পর জানা যায় তার আসল নাম বৃষ্টি খাতুন। জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম গ্রামের পশ্চিমপাড়ায়।
কলেজের সার্টিফিকেট ও জন্ম নিবন্ধনেও তার নাম বৃষ্টি খাতুন।
বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে অভিশ্রুতি নামে পরিচিত বৃষ্টির বাবা মরদেহ গ্রহণ করতে গেলে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা জানান, নিয়মিত পূজা করতে মন্দিরে যেতেন অভিশ্রুতি। নিজেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবেই পরিচয় দিতেন।
মৃত্যুর পর তার পরিচিত অনেকেই দাবি করেন যে, অভিশ্রুতি তাদের জানিয়েছিলেন তিনি শাবলুল ও বিউটির পালক মেয়ে। ভারতে সনাতন ধর্মের বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর কুষ্টিয়ার এই মুসলিম পরিবার তাকে দত্তক নেয়।
এমন পরিস্থিতিতে লাশ হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। এপরপর তার ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়। ১১ দিন পর পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় তার পরিচয়।
অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে থাকা ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার ডিএনএ নমুনা মিলেছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের এই শিক্ষার্থী নজরুল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির (পাইপ ও ফিটিংস) মালিক নজরুল ইসলামের চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয়।
মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, “মরদেহ শনাক্তের বিষয়ে সিআইডি এখনো আমাদের কোনও কিছু জানায়নি। ডিএনএ যদি শনাক্ত হয় তবে অবশ্যই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।”
বৃষ্টির বাবা শাবলুল আলম সবুজ ও নাজমুলের মামা আনোয়ার হোসেনও জানিয়েছেন, তাদেরকে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তারা পুলিশের কাছ থেকে তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছেন।