“আগের দিন থাকলে এখন আপনের সাথে কথা কওয়ার সময় থাকতো না আমার। ভিড়ে দোকানের সামনে দাঁড়ানোরও জায়গা পাইতেন না। আর এবার দেখেন বইসা বইসা আপনের লগে গল্প করতেছি। এবার বোঝেন ব্যবসা কেমন চলতেছে।”
কথাগুলো বলছিলেন বেইলি রোডের বার্গার অন নামের এক দোকানের কর্মচারী মো. এরশাদ। এবার রমজানে ইফতার কেমন বিক্রি হচ্ছে—এ কথা জানতে চাইলে এভাবেই উত্তর দেন তিনি। বুধবার বিকাল ৪টার দিকে কথা হয় এরশাদের সঙ্গে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি কটেজের পাশেই বার্গার অন নামের দোকানটি। সেখানে সাজানো রয়েছে ডিম চপ, চিকেন কাটলেট, ভেজিটেবল রোল, চিকেন চপসহ আরও অনেক মুখোরোচক ইফতার সামগ্রি। তবে ক্রেতার তেমন দেখা নেই। এরশাদ বলেন, “আগে কাস্টমারের ভিড়ের কারণে ফুটপাত দিয়ে কেউ হাঁটতে পারতো না। আর এবার সব ফাঁকা।”
বেইলি রোডে ইফতারের জন্য জনপ্রিয় নাম জ্যাগেরি রেস্তোরাঁ ও পিঠা ঘর। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, “ইফতারির জন্য ঐতিহ্যবাহী জায়গা হচ্ছে বেইলি রোড। কিন্তু গ্রিন কোজি কটেজের আগুনের কারণে সেই ঐতিহ্য এবার ঝুঁকির মুখে।
“অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। আবার অনেক রেস্টুরেন্ট অভিযানের ভয়ে এমনিতেই বন্ধ রাখা হয়েছে। আর যে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট খোলা আছে, সেগুলোতেও ক্রেতা নেই। প্রথম রোজাতে ইফতারি বিক্রি খুবই কম ছিল। তাই আজ দ্বিতীয় দিনে (বুধবার) আমরা বিক্রির জন্য খুব কম পরিমাণ ইফতার সামগ্রী তৈরি করেছি। সেটুকুও বিক্রি করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।”
“এভাবে চলতে থাকলে বেইলি রোডে রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না,” যোগ করেন নাজমুল ইসলাম।
বুধবার বিকালে বেইলি রোডের ইফতারের দোকানগুলোতে ক্রেতা তেমন না দেখা গেলেও পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি কটেজের সামনে ভিড় লেগেই ছিল। সেখানে কেউ আসেন কেবল ভবনটি দেখতে। আবার কেউ যাতায়াতের সময় থমকে দাঁড়াচ্ছেন পোড়া ভবনটির সামনে।
তাদের মধ্যে একজন কলেজছাত্র মো. তাহিন। রমনায় যে ভবনে তাহিনদের বাস, সেটারই একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন কেজি কটেজে নিহত বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী লামিশা। বেলা ৩টার দিকে খালা সোহেলা সিলভীকে সঙ্গে এখানে আসেন। ছবি তুলছিলেন তাহিন। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমাদের ভবনেই থাকতেন লামিশা। আজ ব্যক্তিগত কাজে বেইলি রোডে এসে ভবনটি দেখে মন খারাপ হয়ে গেল।”
বেইলি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল সাইকেল থামিয়ে পোড়া ভবনটির ছবি তুলছিলেন রফিকুল ইসলাম। কক্সবাজারের বাসিন্দা রফিকুল ব্যবসার কাজে ঢাকা এসেছিলেন। তিনি বলেন, “মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় চালক ভবনটি দেখালেন। তাই থেমে ছবি তুললাম। এই ভবনে এতগুলো মানুষের প্রাণ চলে গেছে, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।”
পাশেই নিজের মোবাইলে গ্রিন কোজি কটেজের ছবি তুলছিলেন রক্তিম কুমার নামে এক ব্যক্তি। রক্তিম জানান, তার বাড়ি গোপালগঞ্জ। শুধু পুড়ে যাওয়া ভবনটি দেখার জন্য বেইলি রোডে এসেছেন তিনি।
রক্তিমের পাশে দাঁড়িয়েই নিহতদের জন্য আফসোস করছিলেন এক নারী। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে ভিকারুন্নেসায় পড়াশুনা করে। কোজি কটেজের আগুনে আমার মেয়ের বান্ধবী মাইশাও মারা গেছে। তাই ভবনটি দেখলেই মনের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় আমার।”
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণ যাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। রেস্টুরেন্টগুলোতে চলছে অভিযান। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পুলিশের অভিযানের ভয়ে বন্ধ আছে অনেক রেস্টুরেন্ট।