রবিবার সকাল পৌনে ৯টা। ঢাকার বাংলামোটরে প্রধান সড়কের ওপর সারিবদ্ধভাবে সাজানো পুলিশের ব্যারিকেড। শাহবাগমুখী বাসগুলো যাচ্ছিল মগবাজারের দিকে। বর্ষবরণের আয়োজন থাকায় নিরাপত্তার কারণে প্রতিবছরের মতো এবারও শাহবাগকেন্দ্রিক সবদিকের রাস্তা বন্ধ। তাই শাহবাগমুখী সবাইকে যেতে হচ্ছিল হেঁটেই।
ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৯টা ছুঁই ছুঁই। “বাসে তো আইতে পারতা না”– কথাটা এক আত্মীয়কে বলে হাসতে হাসতে শাহবাগের মেট্রোস্টেশন থেকে নামছিলেন বাবুল বিশ্বাস। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে রমনার বটমূলে যাচ্ছিলেন তিনি।
বাঙালির সবচেয়ে বড় সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখে মেট্রোতে চড়ে সরাসরি শাহবাগ আসতে পারায় তার মুখে ছিল স্বস্তির এই হাসি।
শুধুই বাবুল বিশ্বাস নন, নগরবাসী এবারই প্রথম মেট্রোরেলে চড়ে বর্ষবরণে শাহবাগে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে মেট্রোর কারওয়ান বাজার এবং শাহবাগ অংশ খুলে দেওয়া হয়। মেট্রোর শাহবাগ স্টেশন স্বস্তি এনেছে অনেক যাত্রীর মনে। তাদের কারও কারও মতে, বর্ষবরণে মেট্রোরেলের শাহবাগ স্টেশন যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা।
মেট্রোরেলে বহুবার চড়লেও শাহবাগে রবিবারই প্রথমবার নামেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বাবুল বিশ্বাস। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বর্ষবরণে এবারই প্রথম। ভিড় নাই, ভিড় নাই কোনও।”
শাহবাগে মেট্রোস্টেশন থাকাতে খুবই ভালো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাসে আসলে বাংলামোটর নামিয়ে দিত। এখন শাহবাগ নামতে পারতেছি। ১২ মিনিটে চইলা আসছি শাহবাগে।”
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেই এখানে আসা জানিয়ে তিনি বলেন, “রমনা বটমূলে সবাই যেভাবে ঘুরতে আসছে, আমরাও সেভাবে ঘুরতে আসছি।”
মতিঝিল থেকে মেট্রোরেলে চড়ে শাহবাগে আসেন রাকিবুল হাসান। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমি প্রতিবছর যে পর্যন্ত আসা যেত সে পর্যন্ত এসে বাকিটা হেঁটে যেতাম। এবার বাসা থেকে মতিঝিল আসছি, তারপর সরাসরি শাহবাগ।”
মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ নাই জানিয়ে তিনি বলেন, “ভিড় তেমন একটা নাই। তবে বিকালে কিছুটা যাত্রীচাপ বাড়বে। এখনও অনেক সকাল। ভিড় বাড়ার সাথে হয়তো মানুষের চাপ বাড়বে।”
মতিঝিল থেকে বন্ধুকে নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে এসেছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজমিন সুলতান। বর্ষবরণে মেট্রোরেলের শাহবাগ স্টেশন নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বলে মত তার।
সকাল সন্ধ্যাকে আজমিন বলেন, “এর আগে পহেলা বৈশাখে শাহবাগ পর্যন্ত কখনোই গাড়িতে আসা যেত না। রিকশা নিয়ে আসলেও অন্য কোথাও নেমে যেতে হতো।”
শাহবাগে মেট্রোস্টেশন হওয়ায় বেশ সাশ্রয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ভাড়াও কম লাগছে। আবার সময় বেঁচে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এটা খুব আনন্দের।”
প্রেসক্লাব থেকে মেট্রোরেলে চড়ে শাহবাগে আসা নান্টু মিয়া বলেন, “মেট্রোরেলে ঘোরাফেরা করলাম। দেখলাম ভালোই লাগতেছে।”
তিনি বলেন, “পল্টন আইসা শুনি শাহবাগের ওইদিক দিয়া রাস্তা বন্ধ। পরে হাঁইটা (হেঁটে) প্রেসক্লাব আইসা মেট্রোতে চইড়া শাহবাগে নামছি।”
বর্ষবরণের সকালে মেট্রোরেলের শাহবাগ স্টেশন অনেকটা ফাঁকা থাকলেও সময় বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। উৎসব শেষে অনেকেই শাহবাগ ছাড়তে শুরু করায় হয় এই ভিড়।