সপ্তাহের ছয়দিন সাত সকালে উঠতে হয় কাজে যাবেন বলে। গাড়ি ধরতে পথে নেমেও চোখটা একটু কচলে নিতে হয়। কর্মজীবী মানুষের একটাই ভাবনা থাকে, ছুটির দিনে আরাম করে বেশি বেশি ঘুমিয়ে নেওয়া যাবে।
অথচ সেনসরিমটর নিউরোবিজ্ঞানি ই পল জেহর বলছেন, ছুটিতে বেশি ঘুমিয়েছেন তো জেট ল্যাগে পড়েছেন।
বিকামিং ব্যাটম্যান, ইনভেন্টিং আয়রন ম্যান, প্রজেক্ট সুপারহিরো এবং চেজিং ক্যাপ্টেন আমেরিকা বইয়ের এই লেখক ঘুম নিয়ে লিখেছেন সাইকোলজি ম্যাগাজিনে। তার লেখা থেকে অনুবাদ করে এই প্রতিবেদন সাজিয়েছে সকাল সন্ধ্যা।
ঘুমের অদল-বদল শরীর ও মস্তিষ্ক কীভাবে নেয় তা নিয়ে আমার জানার আগ্রহ অনেক। আমার ঘুমের অভ্যাস নিয়েও পরীক্ষা করেছি আমি। সবাই যেমন ছুটির দিনে বিছানা ছেড়ে উঠবে না বলে মনস্থির করে আমিও তাই করেছি। বেশি ঘুমিয়ে ওঠার পর দেখলাম, দিনের বাকি সময় কেমন যেন মন মরা লাগে। হঠাৎ মনে হলো, ঘোরাঘুরি শেষে জেট ল্যাগ যখন জাঁকিয়ে ধরে তখনও এমন লাগে।
শেষ পর্যন্ত বেশি ঘুমের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে ঠিক করি, সপ্তাহের প্রতিদিনই একই সময় ঘুম থেকে উঠব। খেয়াল করে দেখলাম, আমি আগের চেয়ে বেশ ভালো বোধ করছি।
সপ্তাহে একটা দিন একটু বেশি ঘুমিয়ে নেওয়ার পর যে ঘোর থেকে যায়, তা সোশ্যাল জেট ল্যাগ। এই ব্যাখ্যা হালেই উঠে এসেছে বলেই হতো ইঁদুর নিয়ে একটি গবেষণা নজরে এসেছে আমার।
সারকাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ির ছন্দ ঠিক রাখতে হলে আলো ও শরীরচর্চার পরিমাণও ঠিক রাখা চাই। কিন্তু হুট করে ঘুমের সময় পাল্টে গেলে শরীরে এর প্রতিক্রিয়া জেট ল্যাগ বা বিমান ভ্রমণের পরের ক্লান্তির মতোই।
ইউনিভার্সিটি অব নেভাদার মাইকেল ডায়াল ও তার সহকর্মীরা রক্তে চিনি, ওজন এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চার ভূমিকা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। আর এজন্য ইঁদুর নিয়ে পরীক্ষায় নেমে পড়েন তারা।
শরীরচর্চা, কোনো কাজ করছে না, সোশ্যাল জেট ল্যাগ এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠে এমন চারটি দলে ইঁদুর ভাগ করে নেওয়া হয়।
সোশ্যাল জেট ল্যাগ দলে সপ্তাহে তিন দিন ছুটি রাখা হয়। চার ঘণ্টা বেশি ঘুম দিয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠারও অনুমোদন ছিল।
ইঁদুরগুলোর সুস্থতার বিভিন্ন পর্যায় পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল শুরুতে এবং ছয় সপ্তাহের বিরতি দিয়ে। ঘুমের দলে থাকা ইঁদুরগুলোর শারীরিক কার্যকারিতা, ওজন, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ, মাইটোকন্ড্রিয়াল কার্যকারিতায় ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়।
অর্থাৎ ঘুমের সময়ে অনিয়ম কিংবা হুট করে বেশি ঘুমিয়ে নিলে সোশ্যাল জেট ল্যাগ দেখা দেয় যা শরীরের জন্য উপকারি নয়।
আমি ঠিক করেছিলাম যেখানেই যাই না কেন, যে টাইম জোনেই থাকি না কেন আমার ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়ে কোনো হেরফের হবে না। আলো এবং কাজেকর্মে নড়াচড়া চলতে থাকলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারে আমরা সজাগ আছি। তখনই আমাদের দেহঘড়ির ছন্দপতন ঘটে।
আমি তাই সময় মতোই ঘুম থেকে উঠে পড়ি। আমার কাজ সেরে নেই। প্রথম বার এতে খারাপ লাগলেও ভ্রমণে গেলে এই অভ্যাস কাজে দেবে।
দিনের আলো এবং মান সময়কে ঘিরে বছরে দুবার ঘড়ির কাঁটায় রদবদল করার হাস্যকর রীতি দিয়ে প্রতিটি দেশের নাগরিকদের উপর সামাজিক জেট ল্যাগ চাপিয়ে দেওয়া হয়। গায়িকা টেইলর সুইফট যদিও মন্তব্য করেছিলেন, “জেট ল্যাগ হলো যার যার বেছে নেওয়া বিষয়”; এই কথার পরও সোশ্যাল অথবা ভ্রমণজনিত কারণে জেট ল্যাগ আমরা অস্বীকার করতে পারি না একেবারেই।