উপজেলা ভোটে ছেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন, সংসদ সদস্য হয়ে এলাকায় বসে তার পক্ষে শাজাহান খান কাজ করছেন বলে উঠেছে অভিযোগ।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর একের পর এক অভিযোগের পর টনক নড়ল রিটার্নিং কর্মকর্তার। এই সংসদ সদস্যকে ছেলের হয়ে প্রচারে না নামতে দেওয়া হলো চিঠি।
রোববার বিকালে মাদারীপুরের নতুন শহরে শাজাহান খানের বাড়িতে চিঠি পৌঁছে দেওয়া হলেও তা একদিন পরে জানাজানি হয়।
মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহম্মেদ আলী সকাল সন্ধ্যার জিজ্ঞাসায় বলেন, “নির্বাচনী কোনও কার্যক্রমে অংশ না নিতে উনাকে (শাজাহান খান) বলা হয়েছে।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি সপ্তাহখানেক ধরে মাদারীপুরে তার বাড়িতে অবস্থান করছেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাদারীপুর সদর আসনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তার ছেলে আসিবুর রহমান খান। তিনি আনারস প্রতীকে লড়ছেন।
বিএনপির বর্জনের কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। তবে এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের ভোটে প্রার্থী না হতে বলা হয়।
কেন্দ্রের সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে নামেন আসিবুর, যার শ্বশুর আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারও কুমিল্লার সংসদ সদস্য।
নির্বাচনে আসিবুরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগেরই স্থানীয় নেতা পাভেলুর রহমান শফিক খান। তিনি শাজাহান খানের চাচাত ভাই হলেও মাদারীপুরের রাজনীতিতে শাজাহান খানের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী।
সংসদ সদস্যদের স্থানীয় নির্বাচনে ভোটের প্রচারে নামা আচরণবিধির লঙ্ঘন হলেও শাজাহান খান ছেলেকে জেতাতে সেই কাজটি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তিনি অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, “মাদারীপুরে যখন থাকি, তখন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে কথাবার্তা বলি। এর বাইরে অন্যকিছু না। যারা অভিযোগ দিচ্ছে, তারা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য এ কাজ করছে।”
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করে যাচ্ছিলেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলে আসছিলেন, “১৫টিরও বেশি চিঠি দেওয়া হয়েছে কমিশনে। যেখানে ২২টি অভিযোগ করা হয়েছে। একটিওর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনের এমন চুপ থাকাটা প্রশ্নবিদ্ধ।”
এরপর ভোটগ্রহণের এক দিন আগে শাজাহান খানকে সতর্ক করে চিঠি গেল। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, পাভেলুরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই চিঠিটি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পাভেলুর বলছেন, “শাজাহান খান তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে নির্বাচনের দিন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। এতে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এজন্য প্রশাসনের জোরাল ভূমিকা কামনা করছি।”
তবে তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর বলেন, “নির্বাচনের দিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে শফিক খান (পাভেলুর)। বিভিন্ন মানুষের মাঝে টাকা ছড়াচ্ছে, বহিরাগতদের দিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।”
সুষ্ঠু ভোট হলে পাভেলুর হারবে আঁচ করে গোলযোগ বাঁধাতে চাইছেন বলে শাজাহান খানের ছেলের দাবি।