বিশ্বের বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হলো ইনস্টাগ্রাম। গত কয়েক বছরে অগুনতি শিল্পী তাদের পোর্টফোলিও আপলোড করেছেন প্ল্যাটফর্মটিতে।
বিশেষ করে আলোকচিত্রী ও চিত্রকরদের জন্য আদর্শ প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছিল ইনস্টাগ্রাম।
কিন্তু এখন শিল্পীরা ইনস্টাগ্রাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা তাদের শিল্পকর্মকে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মডেল প্রশিক্ষণে ব্যবহার করছে।
প্রতিবাদ হিসেবে তারা ‘কারা’ নামের একটি পোর্টফোলিও অ্যাপ ব্যবহার করছেন। অ্যাপটি শিল্পীদের জন্যই বিশেষ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে এআই পোস্ট ও প্রশিক্ষণ নিষিদ্ধ।
মেটার এক শীর্ষ কর্মকর্তা গত মে মাসে বলেছিলেন ইনস্টাগ্রামের পাবলিক পোস্ট এআই প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হবে। জুনের ২৬ তারিখ থেকে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হবে, এমনটাও বলেছিলেন তিনি।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটে যত পাবলিক পোস্ট দেওয়া হয়েছে, সেসব এআই প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এআই এতোটাই উন্নত হয়ে উঠতে পারে যে এটি মানুষের সৃষ্ট সাহিত্য, সঙ্গীত এবং শিল্পের জায়গা দখল করতে পারে। ফলে শিল্পীদের কর্মসংস্থানের ক্ষতি ও সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে মানুষের ভূমিকা কমতে পারে।
শিল্পীরা বলছেন, তাদের নিজেদের কাজের বাজারজাতের জন্য মেটা অ্যাপের প্রয়োজন। কিন্তু তাদের কাজ এআই এর খাবার হয়ে উঠতে পারে না। কেউ কেউ বলছেন, তারা এরই মধ্যে তাদের জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে আছেন।
কারা অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা জিঙ্গা ঝ্যাং বলেন, “এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমাদের অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে বেড়ে ৬ লাখ ৫০ হাজার হয়েছে।” ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপটি তৈরি করা হয়। মূল অ্যাপটি এখনও নির্মাণাধীন। গত সপ্তাহে ব্যবহারকারীদের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় অ্যাপটি কয়েকবার ক্র্যাশ করেছে।
অ্যাপলের র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, কারা অ্যাপটি অ্যাপলের স্টোরে পঞ্চম সর্বাধিক ডাউনলোড করা অ্যাপ ছিল। শিল্পী ও কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ইনস্টাগ্রাম ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি প্ল্যাটফর্মটির উপর কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ঝ্যাং নিজেও একজন আলোকচিত্রী। তিনি ও আরও অনেক শিল্পী গুগল ও স্ট্যাবিলিটি এআই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এই কোম্পানিগুলো তাদের এআইকে প্রশিক্ষিত করতে কপিরাইট কনটেন্টও ব্যবহার করছে। লেখক জর্জ আর. আর. মার্টিন ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নিউ ইয়র্ক টাইমসও মামলা করেছে।
শিল্পী ইভা রেডামন্টের মতে, তিনি শিল্পীদের জন্য ‘চার-পাঁচটি’ ইনস্টাগ্রাম বিকল্পের বিজ্ঞাপন দেখেছেন। তবে কোন অ্যাপটি তার সর্বোচ্চ স্বার্থে কাজ করে তা মূল্যায়ন করা কঠিন।
ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক বেন ঝাও বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি অ্যাপ দেখেছেন যা ব্যবহারকারীদের এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকৃষ্ট করে যা তারা পূরণ করে না। তার মতে, শিল্পীদের উদ্দেশ্যে তৈরি করা কিছু প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যেই এআই ফার্মে পরিণত হয়েছে।
সোশাল মিডিয়ায় শিল্পীরা এখনও এআই দিয়ে তৈরি শিল্পকর্ম আপলোড করতে পারেন না। কারণ ‘বিস্তৃত নৈতিকতা ও তথ্য গোপনীয়তা সমস্যার’ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শিল্পীরা তাদের এআই নির্মিত কাজ শেয়ার করতে পারবেন না।
মেটার মুখপাত্র থমাস রিচার্ডস ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, তাদের কোম্পানির কাছে এমন কোন বিকল্প নেই যা ব্যবহারকারীদের তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে পারে।
তবে তিনি বলেন, “কেউ চাইলে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপত্তি করতে পারে। বিশেষ করে যদি তারা এমন এলাকায় বাস করেন যেখানে গোপনীয়তার শক্তিশালী আইন রয়েছে।”