সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের পাসপোর্ট জালিয়াতি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড- ২০২০, ২০২১ এর বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
এদিন ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন দুদক চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক, মোছা. আছিয়া খাতুন, দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন, জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কোনও মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিধিতে দুর্নীতি দমনের কোনও কথা বলা নেই। সব মন্ত্রণালয় যেন দুর্নীতির ব্যারেজ খুলে রেখেছে। মন্ত্রণালয়গুলোর আইনে দুর্নীতি বিরোধী ধারা থাকতে হবে।
দুর্নীতি প্রমাণ ও দমন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ, আর তা দুদকের একার পক্ষে সব সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা ব্যবস্থা নিলে এত অভিযোগ দুদকে আসতো না। তাদের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে দুদকে অভিযোগ কম আসবে- দুদক এটাই চায়। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি যেন না হয় তার জন্য প্রতিরোধ করা জরুরি। সাংবাদিকরা যে কাজ করে, আর দুদক যে কাজ করে—এসব কাজ একে অপরের পরিপূরক।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাই ভাইয়ের পাসপোর্ট জালিয়াতি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি ইতিমধ্যে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”
‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে ইসি ।
আর আজিজের ভাই হারিছ আহমেদের স্ত্রী দিলারা হাসান ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের স্ত্রী শামীম আরা খানও ভুয়া তথ্য দিয়ে ই-পাসপোর্ট নিয়েছেন বলেও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
সোমবার ২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজয়ী ১২ জন সাংবাদিক দুদক চেয়ারম্যানের হাত থেকে ক্রেস্ট, সনদ ও আর্থিক সম্মানী গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, “সমাজে যাদের ক্ষমতা আছে তারাই দুর্নীতি করে। আপনারা সিআইপি, ভিআইপি- যাদেরকে সম্মান দিয়ে এগিয়ে আনতে যান তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে তাদের মুখ উন্মোচন করতে হবে। সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের ভয় পেলে চলবে না। কালোকে সর্বদা কালো বলতে হবে, লেখনিতে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে।”
দুদক কমিশনার মোছা. আছিয়া খাতুন বলেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য সুন্দর একটি প্রজন্ম রেখে যেতে হবে। আর এজন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “প্রতিযোগিতার জন্য জমা হওয়া প্রতিবেদনগুলোতে দুর্নীতির অনেক তথ্য-উপাত্ত এসেছে, সেগুলো দুদক আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চালালে দুর্নীতিবাজরা আতঙ্কে থাকবে। একইসঙ্গে সাংবাদিকরা তাদের কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবে।”
২০২০ ও ২০২১ সালে যারা বিজয়ী
২০২০ সালের জন্য প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব, দ্বিতীয় হয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিজানুর রহমান চৌধুরী, তৃতীয় হয়েছেন দৈনিক কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল। একইবছর ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাহবুব কবীর চপল, দ্বিতীয় হয়েছেন মাছরাঙ্গা চেয়ারম্যানের বিশেষ প্রতিনিধি কাওসার সোহেলী, তৃতীয় হয়েছেন ডিবিসি নিউজ টেলিভিশনের মুহাম্মদ আরাফাতুল মোমেন।
২০২১ সালের জন্য প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান, দ্বিতীয় হয়েছেন আমাদের সময়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জিয়াদুল ইসলাম, জাগো নিউজের স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল হক পাটওয়ারী। একইবছরে ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. আবদুল্লাহ আল রাফি, দ্বিতীয় হয়েছেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি নূর সিদ্দিকী।