অষ্টাদশ মিসরীয় রাজবংশ ছিল প্রাচীন মিসরের বিখ্যাত ও প্রভাবশালী রাজবংশগুলোর একটি। এই রাজবংশের অনেক ফারাওয়ের সমাধি বিভিন্ন সময়ে আবিষ্কৃত হলেও দ্বিতীয় থুতমোসের সমাধিস্থল এতদিন অজানাই ছিল।
১২ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা ও অনুসন্ধানের পর অবশেষে মিসরের লাক্সর শহরের কাছে নীল নদের পশ্চিম তীরের দিকে সম্প্রতি এই সমাধির খোঁজ পান ব্রিটিশ-মিসরীয় গবেষকদের একটি দল।
১৯২২ সালে প্রাচীন মিসরের রাজা তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর এই প্রথম আরেক ফারাওয়ের সমাধিস্থলের সন্ধান মিলল, যিনি এই অঞ্চলটি শাসন করেছিলেন সাড়ে তিন হাজার বছর আগে।
গবেষকদের দলটি এমন এক স্থানে ফারাও দ্বিতীয় থুতমোসের সমাধির সন্ধান পেয়েছেন, যা মূলত রাজকীয় নারীদের সমাধিস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সমাধির ভেতরে প্রবেশ করার পর তারা দেখতে পান, এটির দেয়াল বিশেষভাবে সজ্জিত, যা ফারাওদের সমাধির বৈশিষ্ট্য।
এক যুগের বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান কার্যক্রমের মাঠ পর্যায়ের পরিচালক ড. পিয়েরস লিথারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান নিউ কিংডম রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও মিসরের পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয় ফারাও দ্বিতীয় থুতমোসের সমাধিটির খোঁজ করে যাচ্ছিলেন।
সেটি আবিষ্কারের পর ড. লিথারল্যান্ড বিবিসিকে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, “সমাধির ভেতরে ঢোকার অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। অবাক বিস্ময়ে মন ভরে যেতে বাধ্য কারণ অপ্রত্যাশিত কিছু খুঁজে পেলে মন নানা ভাবনায় আলোড়িত হয়।
“আমি যখন সমাধি থেকে বের হয়ে এলাম, তখন আমার স্ত্রী বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি, তার সামনে কেঁদে ফেলি।”
সমাধি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটির ছাদের অংশবিশেষ এখনও অক্ষত রয়েছে। নীল রঙের এই ছাদের ওপর হলুদ রঙা তারা আছে। একমাত্র ফারাওদের সমাধিতেই এমনটা দেখা যায়।”
বিবিসি জানিয়েছে, প্রাচীন মিসরের ফারাও দ্বিতীয় থুতমোসের মমি করা দেহাবশেষ ২০০ বছর আগে খুঁজে পেয়েছিলেন গবেষকরা। কিন্তু তার মূল সমাধিস্থলের অবস্থান এতদিন কেউ জানত না।
মিসরের একসময়ের শাসক দ্বিতীয় থুতমোস ফারাও তুতেনখামেনের পূর্বপুরুষ ছিলেন। তার শাসনকাল খ্রিস্টপূর্ব ১৪৯৩ থেকে ১৪৭৯ সাল পর্যন্ত ছিল বলে ধারণা করা হয়।
অন্যদিকে ফারাও তুতেনখামেনের শাসনকাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩২ থেকে ১৩২৩ সাল পর্যন্ত। তার সমাধি ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছিলেন ১৯২২ সালে।
ফারাও দ্বিতীয় থুতমোস বেশি পরিচিত তার স্ত্রী রানী হাতশেপসুতের কারণে। তাকে মিসরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফারাও হিসেবে গণ্য করা হয়।
তাছাড়া রানি হাতশেপসুত ছিলেন মিসরের হাতে গোনা নারী ফারাওদের একজন, যিনি নিজের ক্ষমতায় মিসর শাসন করেছিলেন।