Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

ভার্জিনিয়ার ভোটকেন্দ্র ঘুরে যা দেখা গেল

ভোটকক্ষের ভেতরে ঢোকা এবং ছবি তোলা বা ভিডিও করায় ছিল না কোনো বাধা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ভোটকক্ষের ভেতরে ঢোকা এবং ছবি তোলা বা ভিডিও করায় ছিল না কোনো বাধা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]
যুক্তরাষ্ট্র থেকে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে

৫ নভেম্বর, সকাল ৭টা। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়া এলাকা। মূল সড়ক থেকে একটি উপপথ ধরে এগোলেই সামনে পড়ে হাইবলাভ্যালি এলিমেন্টরি স্কুল। ভোট উপলক্ষে স্কুলটি বন্ধ। সেই উপপথ ধরে এগোতেই দেখা গেল সারিবদ্ধভাবে বসানো কিছু প্ল্যাকার্ড। প্রথম প্ল্যাকার্ডে লেখা– ‘ট্রাম্প সেফটি, কমলা ক্রাইমস’। আরেকটি প্ল্যাকার্ডে দেখা গেল ট্রাম্পের সেই বিখ্যাত স্লোগান– ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’।

প্ল্যাকার্ডগুলো পেরিয়ে যাওয়ার পরই সামনে পড়ল ওই এলাকার ভোটকেন্দ্র। তবে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে খুব বেশি মানুষের দেখা মিলল না। অবশ্য আশেপাশে তেমন মানুষজন না থাকলেও নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল– রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রতিনিধিকে ঠিকই দেখা গেল টেবিল নিয়ে বসে থাকতে।

সেখান থেকে দুই পার্টির পক্ষ থেকে ভোটারদের হাতে নিজ নিজ দলের স্যাম্পল ব্যালট দেওয়া হচ্ছিল। তবে মুখে কিছু বলা হচ্ছিল না। আর এখানেই বাংলাদেশের ভোটকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটকেন্দ্রের বড় পার্থক্য চোখে পড়ল।

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার কিছুটা বাড়লেও সেটাও ছিল হাতে গোনা। ভোটকক্ষের ভেতরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। ভোটার আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার পরিচয়পত্র দেখে বা নম্বরটি শুনে তাকে ভেতরে পাঠাচ্ছিলেন।

অনুমতি নিয়ে ভোটকক্ষের ভেতরেও ঢোকা গেল। এই কেন্দ্রের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা বেঞ্জামিনকে দেখাতে হলো সকাল সন্ধ্যার পরিচয়পত্র। এরপর তিনি নিজেই পুরোটা কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখালেন, পরিচয় করিয়ে দিলেন নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা অন্যদের সঙ্গেও। জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও ভিন দেশ থেকে আসা একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এত আন্তরিকতা নিয়ে, এত সময় নিয়ে হাসিমুখে তারা কথা বললেন…তখনও জানা ছিল না অবাক করার মতো আরও কিছু বাকি আছে।

ভোটাররা আসছেন, ভোট দিচ্ছেন, তবুও বেঞ্জামিন ঘুরে ঘুরে ভোটের টেবিল দেখাচ্ছিলেন, দেখাচ্ছিলেন কীভাবে একজন ভোটার ভোট দেন, কীভাবে সেটা ব্যালেট বাক্সের ভেতরে ফেলতে হয়। জানালেন, দিনশেষে কীভাবে এই ভোট গণনা করা হবে।

বেঞ্জামিন জানালেন, ভোটকক্ষের ভেতরে ছবি তোলা যাবে, করা যাবে ভিডিও-ও। তবে অনুরোধ করলেন, ছবি বা ভিডিওতে যেন ভোটারের মুখ দেখা না যায়। কারণ এটা সেই ভোটারের প্রাইভেসির বিষয়। কারও প্রাইভেসি ভাঙার অধিকার তার সরকারেরও নেই, গণমাধ্যমের তো নেই-ই।

ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে তেমন মানুষজনের দেখা মেলেনি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

এ ছাড়া সেখানে আর কোনও বাধা ছিল না সংবাদমাধ্যমের জন্য। যতক্ষণ ইচ্ছে ভেতরে থাকা গেল। আর দেখা গেল, তিন কিশোর সন্তানের হাত ধরে, কোলে শিশু সন্তানকে নিয়ে, এমনকি হাতে রশিতে বেঁধে প্রিয় কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে এসেও নির্বিঘ্নে ভোটকক্ষের ভেতরে ঢোকা যায়, দেওয়া যায় ভোট। কাউকেই কাপড় দিয়ে ঘেরা কোনও গোপন কক্ষে যেতে হয় না। নির্ধারিত টেবিলে বসে উন্মুক্তভাবে ভোট দিতে পারে সবাই।

ভেবেছিলাম, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়বে, হয়তো দেশের পরিচিত সেই দৃশ্য না দেখা গেলেও সকালের নীরব-কোলাহলহীন অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে। সে আশাতেই দুই ঘণ্টা পর আবার এই কেন্দ্রে গিয়ে এবার হতাশ হতে হলো।

কেবল সময়টাই বদলেছে, আর কিছুরই বদল হয়নি। ভোটার উপস্থিতি সেই আগের মতোই।

বিকাল ৪টার পর আরেক কেন্দ্র ওয়েস্ট পটোমক হাই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, এখানেও সেই সকালের কেন্দ্রের মতোই অবস্থা; বরং আরও করুণ। এখানে এক ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করেও পাঁচজন ভোটারকে লাইনে পাওয়া গেল না। কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকজন ছিলেন ভোটকক্ষের ভেতরে।

কেন উপস্থিতি এত কম

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে মানুষ কেন ভোটকেন্দ্রে এত কম– এমন প্রশ্নে জানা গেল, মানুষ আর এখন সশরীরে এসে ভোট দিতে উৎসাহী নয়। তাই ভোটার উপস্থিতি কম। ভোটটা আসলে হয়ে গেছে আগাম ভোটে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটির কাছাকাছি। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ৫৩ শতাংশের মতো। এর মধ্যে প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়ে ফেলেছেন।

মানুষ যেখানে অনলাইনেই ভোট দিয়ে দিতে পারছেন সেখানে কেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়াটা তাদের কাছে অনাগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভার্জিনিয়ায় কমলা

নির্বাচন যত ঘনিয়ে এসেছে, ততোই মানুষের মুখেমুখে ফিরেছে কমলা হ্যারিসের নাম। অথচ কমলার নির্বাচনে আসাই ছিল ‘বাই চান্স।’

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দলের চাপে বসে যাওয়াতে নির্বাচনে আসেন কমলা হ্যারিস। তবে দিনে দিনে তার পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। বিশেষ করে নারীরা কমলার পক্ষ নিয়েছেন। তার অন্যতম কারণ ছিল ট্রাম্পের গর্ভপাত নীতি এবং অভিবাসন নীতি। এই দুই নীতির কারণে কমলা সাধারণ নারী এবং অভিবাসীদের সমর্থন পেয়েছিলেন বেশি। বারাক ওবামা, মিশেল ওবামা, জর্জ ক্লুনি, লিওনার্দো ডিকাপ্রিও– কে ছিলে না কমলার পক্ষে।

সকালে হাইবলাভ্যালি এলিমেন্টরি স্কুলে গিয়ে দেখা মিলেছিল মিসেস জো নামে এক নারীর। তার কাছে এই প্রতিবেদক জানতে চেয়েছিলেন– প্রেসিডেন্ট পদে কাকে দেখতে চান।

ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি দেখা গেল রিপাবলিকান পার্টির প্ল্যাকার্ড। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

এই প্রশ্নে জোয়ের উত্তর ছিল অদ্ভুত, “আমি নারী।” চট করে এই উত্তর ধরতে না পেরে ফের একই প্রশ্নে তিনি একই উত্তর দেন, “আমি নারী…।” তখনই মাথায় খেলে যায়– জো একজন নারী, তিনি প্রেসিডেন্ট পদেও একজন নারীকেই দেখতে চান। অর্থাৎ তিনি প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসকে দেখতে চান।

নাম জানার সুযোগ না হলেও ভোট দিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে আরেক নারী ভোটারও জানালেন, তিনিও কমলাকে চান। কমলাকে ভোট দিয়েছেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সেভেন ইলেভেনের মালিক বাংলাদেশি মুন্সী শরীফ জামানও।

এর কারণ হিসেবে তিনি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কথা বলেন– “এই নীতি আমি মানতে পারছি না বলেই কমলাকে চাই।” সেইসঙ্গে তিনি গাজা যুদ্ধের কথাও বলেন।

কিন্তু অনেকেই বলছেন, আমেরিকার লোকজনের মনোভাব অনেকটাই প্রেসিডেন্ট পদে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক। তারা কোনও নারীকে প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চায় না। অনেকেই এখন বলছেন, হিলারি ক্লিনটনের মতো মানুষই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারে নাই, তো আর কমলা…।

৫ নভেম্বর রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত নির্বাচনে স্পষ্টভাবে এগিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে সবসময়ই মুখ্য ভূমিকা পালন করে দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য। তাই ভোটগ্রহণের আগ মুহূর্তেও অঙ্গরাজ্যগুলো চষে বেড়িয়েছেন ট্রাম্প ও হ্যারিস।

দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পেনসিলভানিয়াতে পাল্লা ভারি ট্রাম্পের দিকেই, ট্রাম্প এগিয়ে আছেন মিশিগানেও। পেনসিলভেনিয়াতে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প ৫১ শতাংশ আর কমলা হ্যারিস ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

এর আগে বিভিন্ন জরিপে কমলা হ্যারিস এগিয়ে ছিলেন। যেমন- নিউ ইয়র্ক টাইমসের জনমত জরিপ বলছে, ৪৯ শতাংশ মানুষ হ্যারিস আর ৪৮ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন।

কিন্তু সেগুলো নিয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিক মাহমুদ মেনন খান বলেছিলেন, “জরিপ কেবল অনুমান সামনে নিয়ে আসে আমাদের, যা ভুল হতে পারে, পাল্টাতে পারে। এবার কোনোভাবেই বিজয়ী প্রার্থীকে আগে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।”

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশি বলছেন, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়াই নির্ধারণ করবে কে হবেন এবারের প্রেসিডেন্ট।

এর কারণ হিসেবে মাহমুদ মেনন খান বলেন, “দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়া সবচেয়ে বড়। এখানে রয়েছে ১৯টি ইলেকটোরাল ভোট। যিনি সেখানে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই জিতবেন।” তবে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত পেনসিলভানিয়াতে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও পুরো ফলাফল এখনও ঘোষণা হয়নি। আর তাতে করে রাত অব্দি বোঝা গেল না কে হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত