দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ তাদের পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এই আদেশ দিয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন সার্বিক) আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের আরও যাদের দেশত্যাগে নিষধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- আনভীরের মা আফরোজা বেগম, ভাই সাদাত সোবহান, সাদাত সোবহানের স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌস সোবহান, সাবরিনা সোবহান, সাফিয়াত সোনহান ও সাফওয়ান সোবহান।
এদিন দুদকের উপপরিচালক মো. নাজমুল হুসাইন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নেন।
আবেদনে বলা হয়, আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্থানান্তর, হস্তান্তর, রূপান্তর করার অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, তারা অর্থ পাচার ও দেশত্যাগের পরিকল্পনা করেছেন। এ কারণে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন।
বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের বড় শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৮৭ সালে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড গঠনের মাধ্যমে আবাসন ব্যবসায় পা রাখে গ্রুপটি।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজানসহ ৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান ও তার ভাই শাহাবুদ্দিন আহমেদসহ চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে আদালত।
অপর দুই ব্যক্তি হলেন- মুন্নুজান সুফিয়ানের ভাতিজা শামীমা সুলতানা হৃদয় ও এ এম ইয়াসিন।
সোমবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত দুদকের আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দিয়েছে।
এদিন দুদকের পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠজন দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
স্ত্রীসহ সাবেক এমপি সাদেক-আশরাফের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী খান এবং সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান ও তার স্ত্রী আফরোজা সুলতানার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
দুদকের পৃথক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এই আদেশ দিয়েছে।
এদিন দুদকের উপপরিচালক ওমর ফারুক ও উপপরিচালক রেজাউল করিম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন দুটি করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নেন।
সাদেক খানের আবেদনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ভূমি দস্যুতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সাদেক খান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন ৪৭নং ওয়ার্ড (বর্তমানে ৩৪নং ওয়ার্ড) এর চারবারের কাউন্সিলর।
এসব দায়িত্বে থেকে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানা যায়। অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার স্ত্রীসহ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।
আশরাফের আবেদনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তিন সদস্যের টিমটি অনুসন্ধান করছে। আশরাফ খান তার অবৈধ আয়ে নিজ এলাকায় আনুমানিক ৫১ লাখ টাকার কৃষি জমি, প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট, ভাটারা থানার জোয়ারসাহারা মৌজায় প্রায় ৪৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট করেছেন।
এছাড়া রাজউক এর উত্তরা ৩য় প্রকল্পের প্রায় ৩২ লাখ টাকার প্লট এবং তার স্ত্রী আফরোজা সুলতানার নামে বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক কোটি টাকার প্লট, ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন মর্মে বলে গোপন সূত্রে জানা যায় গেছে।
আশরাফ খান এবং তার স্ত্রী আফরোজা সুলতানা অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।