সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন তাপসের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং তাদের ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার কমিশন থেকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, “সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তার স্বামী এমএস প্রমোশনের (বিজ্ঞাপনী সংস্থা) স্বত্বাধিকারী কবির হোসেন তাপসের বিরুদ্ধে নিজ ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকা লেনদেন, বর্তমান স্থিতি ১৪ কোটি টাকা ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়েছে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নানাজনের করা ‘ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিক’দের তালিকায় মুন্নী সাহার নামও আসে।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার (১৭) নিহত হওয়ার ঘটনায় যে মামলা করেন তার বাবা, সেখানে শেখ হাসিনা, তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে মুন্নী সাহাসহ ৭ সাংবাদিককে আসামি করা হয়।
গত ৩০ নভেম্বর কারওয়ান বাজারে নিজ কর্মস্থল ‘এক টাকার খবর’-এর কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর একদল লোক মুন্নী সাহাকে ঘিরে ধরে এবং তার ওপর চড়াও হয়। খবর পেয়ে তাকে সেখান থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। ওই রাতে প্যানিক অ্যাটাকে ‘অসুস্থ’ বোধ করায় পরিবারের জিম্মায় মুক্তি দেয় পুলিশ। আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেওয়ার শর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশ তখন জানিয়েছিল।
এর আগে গত অক্টোবরে মুন্নী সাহার সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউ সূত্রের বরাত দিয়ে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে লেনদেন নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সেসব খবরে ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকা লেনদেনের কথা বলা হয়। এমন সব খবর আসার পর সরগরম হয় সোশাল মিডিয়া।
তিন দশক আগে সংবাদকর্মী হিসাবে মুন্নী সাহার যাত্রা যেখানে শুরু, সেই ভোরের কাগজের সাবেক মালিকদের টেলিভিশন স্টেশন দেশ টিভির ইউটিউব চ্যানেলেও এই খবরের শিরোনাম ছিল- ‘কয়েকশ কোটি টাকার মালিক সাংবাদিক মুন্নী সাহা’।
প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনেগুলোতে বলা হয়, মুন্নী সাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে বেতনের বাইরেও ১৩৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় ১২০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। স্থগিত করা হিসাবে স্থিতি আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা।
সংবাদপত্র-টেলিভিশনে দীর্ঘ দিন সাংবাদিকতা করে আসা মুন্নী সাহা নিজেকে নিয়ে এই সংবাদ প্রতিবেদনগুলো দেখে হতাশা প্রকাশ করেন।
মুন্নী সাহা দাবি করেন, তাকে জড়িয়ে এসব প্রতিবেদনের শিরোনাম বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। কারণ ওই ব্যাংক হিসাব তার স্বামীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের। সেখানে তিনি নমিনি হওয়া ছাড়া তার আর কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। এমএস প্রমোশনের কর্ণধার কবির হোসেন তাপসও দাবি করেন, তার ব্যবসার সঙ্গে স্ত্রী মুন্নী সাহার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।
ভোরের কাগজ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু হলেও ২০০০ সালে একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশে রিপোর্টার হিসাবে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন মুন্নী সাহা। একুশে টিভি বন্ধ হওয়ার পর তিনি যোগ দেন এটিএন নিউজে।