দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা পাসপোর্টের তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বুধবার দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “কতিপয় দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারী তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যতীত ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করছেন। চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে শাস্তি বা আইনগত পদক্ষেপ এড়ানোর লক্ষ্যে তারা ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেসব দেশে অবস্থান করছেন।”
চিঠিতে বলা হয়েছে, এভাবে ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা নিজেদেরকে আইনি পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করাসহ অপকর্ম ঢেকে রাখার প্রয়াস চালাচ্ছেন।
এ জন্য তারা বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকেন বলে মনে করছে দুদক।
তাদের এমন কার্যকলাপ সরকারি চাকুরি আইন, ২০১৮ এর ৪০ ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, “দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন অনুসন্ধানকালে এ মর্মে তথ্য পাওয়া গেছে যে, সরকারি কর্মচারীদের একাধিক পাসপোর্ট গ্রহণের মূল লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত তাদের অবৈধ সম্পদ গোপন করে বিদেশে পাচার ও ভোগ করা।”
তাদের এমন কার্যকলাপ দেশে দুর্নীতির প্রসারে ভূমিকা রাখছে এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, “ভিন্ন একটি দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের সরকারি চাকুরির নৈতিক দায়-দায়িত্বের প্রতি তাদের অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হয়, যা কোনোক্রমেই বাঞ্ছনীয় নয়।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, দণ্ডবিধির ২১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ২ নং ধারা এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ১১০ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সব আইন অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত সব কমিশন্ড অফিসার, আদালতে কর্মরত কর্মচারী ও বিচারক সরকারি রাজস্ব খাত হতে বেতনভুক্ত সব কর্মচারী, সব স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত, আধা-সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিতে কর্মরত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বিবেচিত হন।
“এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় গণকর্মচারী অথবা তাদের পোষ্যগণ কর্তৃক দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের বিষয়ে রক্ষিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করা একান্ত আবশ্যক।”
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “বিভিন্ন সময়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করা পাবলিক সার্ভেন্টগণের পাসপোর্ট ও এতদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য প্রেরণ করার জন্য ইমিগ্রেশন পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ তিনটি দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে ২৪ জনের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হওয়ার একটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুদক।
এ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা দুদককে অবহিত করতে নির্বাচন কমিশন ও সুরক্ষা সেবা বিভাগকে গত ২৩ ডিসেম্বর চিঠি দেয় দুদক। সংস্থাটির পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান এ চিঠি পাঠান।