চলচ্চিত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে হাজির করার ইতিহাস ১০০ বছরের কাছাকাছি। দীর্ঘ এ সময়ে বেশ কয়েকজন অভিনেতাকেই একাধিকবার প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে।
চার্লস মিডলটন
১২ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে ভিড়ে যান সার্কাসের দলে। পেশাদার অভিনেতা হওয়ার আগ পর্যন্ত করতেন সার্কাসের হাতির দেখাশোনা। এমনি রোমাঞ্চে ভরা আমেরিকান অভিনেতা চার্লস মিডলটনের জীবন।
পরবর্তীতে মঞ্চাভিনেতা হিসেবে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করা মিডলটন প্রশংসিত হন হলিউডের বড় পর্দায়।
‘মিং দ্য মার্সেলাস’ এর মিং চরিত্রের জন্য চিরস্মরণীয় মিডলটনকে তিনবার বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায়।
১৯৩২-এ মুক্তি পায় আমেরিকান সিনেমা ‘দ্য ফ্যান্টম প্রেসিডেন্ট’। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের চরিত্রে মিডলটনকে অভিনয় করতে দেখা যায়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়।
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের চরিত্রে তাকে আরও দুইবার দেখা যায় ‘দ্য রোড ইজ ওপেন অ্যাগেইন’ এবং ‘দ্য ম্যান উইদাউট আ কান্ট্রি’ সিনেমায়।
জোসেফ ক্রেহান
যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে জন্মানো জোসেফ ক্রেহান খ্যাতি কুড়িয়েছেন ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’ (১৯৪৪), ‘ডিক ট্রেসি মিটস গ্রুসাম’ (১৯৪৭) এবং ‘কিড গালাহাড’ এর মতো সিনেমায় অভিনয় করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮তম প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্র্যান্ট চরিত্রে তাকে দেখা গেছে গুনে গুনে ৩ বার।
প্রথমবার ১৯৪১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দে ডায়েড উইথ দেয়ার বুটস’ সিনেমায়। এরপর ১৯৪৪ সালে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব মার্ক টোয়াইন’ ও ১৯৫৩ সালে ‘স্যান অ্যান্টন’ সিনেমায় তিনি একই প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেন।
রয় স্কাইডার
খেলার মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো ছেলেটা একসময় বুঝতে পারলো অভিনয় হতে যাচ্ছে তার সত্যিকারের কারিশমা দেখানোর জায়গা।
স্কুল পেড়িয়ে কলেজের গন্ডিতে প্রবেশ করেই নাম লেখালেন থিয়েটারে। দুইবার অস্কারে মনোনয়ন পাওয়া এই অভিনেতা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন আমেরিকান থ্রিলার মুভি ‘জ’-তে অভিনয় করে।
রয়কে মোট ৩ বার তিন ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাল্পনিক প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।
এর মধ্যে ১৯৯৭ সালেই মুক্তি পায় ‘এক্সিকিউটিভ টার্গেট’ এবং ‘দ্য পিস কিপার’ নামে দুটি সিনেমা। ‘চেইন অব কমান্ড’ নামে অন্য আরেকটি সিনেমা মুক্তি পায় ২০০০ সালে।
‘এক্সিকিউটিভ টার্গেট’ এ রয় ছিলেন প্রেসিডেন্ট কার্লসনের ভূমিকায়, ‘দ্য পিস কিপার’ এ প্রেসিডেন্ট রবার্ট বেকার এবং ‘চেইন অব কমান্ড’ সিনেমায় তিনি প্রেসিডেন্ট জ্যাক কাহিলের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
হ্যাল হলব্রুক
হ্যাল হলব্রুক ‘মার্ক টোয়াইন টু নাইট’ নামে একটি একক মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে প্রথমবার দৃষ্টি কাড়েন। জিতে নেন প্রাইম টাইম এমি অ্যাওয়ার্ড। তখন তিনি ডেনসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
তরুণ বয়সেই অভিনয়ে দারুণ মুন্সিয়ানা দেখানো এই অভিনেতাকে ৫ বার দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চরিত্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের জীবনের উপর নির্মিত টিভি সিরিজ ‘লিংকন’ এ প্রথমবার মূল চরিত্রে হলব্রুককে নেওয়া হয়। টিভি সিরিজটি সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পায় তখন।
কানাডিয়ান-আমেরিকান পলিটিকাল থ্রিলার ‘দ্য কিডন্যাপিং অব দ্য প্রেসিডেন্ট’ সিনেমায় হলব্রুক অভিনয় করেন কাল্পনিক প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম স্কটের ভূমিকায়।
আমেরিকান টিভি মিনি সিরিজ ‘জর্জ ওয়াশিংটন’ এ হলব্রুক ছিলেন প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস এর ভূমিকায়। যিনি ছিলেন আমেরিকার ইতিহাসের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট।
আরেক আমেরিকান টিভি মিনি সিরিজ ‘নর্থ অ্যান্ড সাউথ’ এ তাকে আবারও দেখা যায় আব্রাহাম লিংকনের চরিত্রে। ইতিহাসের ৭ম সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া এই সিরিজের প্রথম সিজন সারাবিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত ছিল। সিরিজের দ্বিতীয় সিজনেও হলব্রুক ছিলেন একই চরিত্রে।
সিডনি ব্ল্যাকমার
আমেরিকান অভিনেত্রী পার্ল ফে হোয়াইট এর এক সিনেমার শুটিং দেখে সিদ্ধান্ত নেন অভিনয়কে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেবেন। তখন তিনি নির্মাণ শ্রমিক। তখনো কেউ জানতো না, এই ব্ল্যাকমার একদিন বিখ্যাত হবেন।
পূর্ণ দৈর্ঘ্য এবং স্বল্প দৈর্ঘ্য সিনেমা মিলিয়ে মোট ৬ বার তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
সিনেমাগুলো হলো- ‘দিস ইজ মাই অ্যাফেয়ার’, ‘দ্য মনরো ডক্ট্রিন’, ‘টেডি, দ্য রাফ রাইডার’, ‘ইন ওল্ড ওকলাহোমা’
‘বাফেলো বিল’ এবং ‘ মাই গার্ল টিসা’।
ইমান ক্রসন
তবে ইউটিউবার ইমান ক্রসন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় বারবার আবির্ভুত হয়ে ছাড়িয়ে গিয়েছেন সবাইকে। এক বারাক ওবামার চরিত্রেই তিনি অভিনয় করেছেন এক-দুবার নয়, দশবার! ভাবা যায়?
ইমান ক্রসন একজন আমেরিকান অভিনয় শিল্পী এবং ইউটিউব ব্যক্তিত্ব। তার স্টেইজ নেইম ‘আলফা ক্যাট’।
বারাক ওবামাকে নিয়ে কন্টেন্ট বানিয়ে ইমান তাতে নিজেই ওবামা চরিত্রে কাজ করেছেন। মজার এই পলিটিকাল কন্টেন্টগুলো মূলত ইমানের তৈরি মিউজিক ভিডিও। তার এই কনটেন্টগুলো এতোই জনপ্রিয় হয় যে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিজেই তাকে হোয়াইট হাউজে ডেকে পাঠান এবং তরুণদের নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।