না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার প্রবীণ অভিনেতা ‘রঙিন নবাব’ খ্যাত প্রবীর মিত্র। মৃত্যুকালে অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যু হয়।
জনপ্রিয় নায়িকা অঞ্জনার মৃত্যুর দুই দিনের মাথায় আরেক শক্তিমান অভিনেতা হারালো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন।
নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে প্রবীর মিত্র গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফুসফুসের সংক্রমণ ও রক্তক্ষরণের কারণে বর্ষীয়ান এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে তার পরিবার।
প্রবীর মিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সোমবার জোহরের নামাজের পর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হবে। এরপর চ্যানেল আইতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে ‘লালকুটি’থিয়েটার গ্রুপে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন।
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন।
প্রায় চার দশকের অভিনয়জীবনে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি।
সবশেষ এসডি রুবেলের পরিচালনায় ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ে জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র; ২০১৮ সালে পান আজীবন সম্মাননা।
অভিনয়ের বাইরে প্রবীর মিত্র ষাটের দশকে ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট খেলেছেন, ছিলেন অধিনায়ক। একই সময় তিনি ফার্স্ট ডিভিশন হকি খেলেছেন ফায়ার সার্ভিসের হয়ে। এ ছাড়া কামাল স্পোর্টিংয়ের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবলও খেলেছেন।
প্রবীর মিত্রের এক মেয়ে ও তিন ছেলে। স্ত্রী অজন্তা মিত্র ২০০০ সালে মারা যাওয়ার পর ২০১২ সালে ছোট ছেলে আকাশও পরপারে পাড়ি জমান।