আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে যে বাড়তি ঋণ নেওয়া হবে, তা সংস্কারের কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তবে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির কাছে নতুন করে কত ঋণ চাওয়া হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সফররত আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আইএমএফের কাছ থেকে যে বাড়তি ঋণ নেওয়া হবে, তা সংস্কারের কাজে ব্যবহার করা হবে। এই অর্থ ব্যবহার হবে অর্থ পাচার প্রতিরোধ, ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কারে।
“তবে আইএমএফের কাছে কত ঋণ চাওয়া হবে, তা এখনও আমরা চূড়ান্ত করিনি। অন্য দাতা সংস্থাগুলো কী পরিমাণ সহায়তা দেবে, সেটা জানার পর আইএমএফকে সহায়তার অঙ্ক জানানো হবে।”
তবে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন বলেছিলেন, আইএমএফের কাছে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া হবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ সংকট সামাল দিতে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার (৪.৫ বিলিয়ন) ডলার ঋণ চেয়েছিল। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি সংস্থাটি বাংলাদেশের চাওয়ার বেশি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। সেজন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কারের শর্ত বাংলাদেশকে বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে।
ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। ধাপে ধাপে শর্তপূরণ সাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ওই ঋণের পুরো অর্থ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।
এর মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নানা কারণে সংকটে থাকা অর্থনীতিতে গতি আনতে আইএমএফের কাছে আরও ঋণ চাইতে যাচ্ছে সরকার।
চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত পূরণের অগ্রগতি মূল্যায়নে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার ঢাকায় এসেছে। এই প্রতিনিধি দলের সঙ্গেই মঙ্গলবার বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে এইএমএফের এই প্রতিনিধি দল।
বৈঠকের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা রকম সংস্কার ও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্পদ দরকার। আমরা যতটুকু পারি দেশীয় সম্পদ আহরণ করব; কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি সহায়তা লাগবে। যেসব ক্ষেত্রে বিদেশি সহায়তা লাগবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বাজেট সহায়তা।
“এছাড়া সংস্কারের বিষয়ে সরকার মোটামুটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকসহ অন্যান্য খাতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে, যদিও এ ক্ষেত্রে কিছু সময় লাগবে।”
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সম্পদের ঘাটতি (রিসোর্স গ্যাপ) কতটা আছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও বিশদ আলোচনা হবে। নীতি ও মূল উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা করবে। বিদেশি মুদ্রার বাজার ও ব্যাংক খাত সংস্কারে কী করতে হবে, সেটাও জানাবে আইএমএফ। তারা এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করবে।
“সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের দল আছে। বিশদ আলাপ করে তারা নিজস্ব চিন্তার বিষয়ে জানাবে। তারপর অক্টোবর মাসে আমরা বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় যাব, সেখানে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা হবে। বর্তমান ঋণ কর্মসূচি নিয়েও আলাপ হবে। ভবিষ্যতের জন্যও আমরা কিছু অনুরোধ করেছি।”
আইএমএফের কাছে কী চেয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, “কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে- ব্যাংক খাত সংস্কার, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, কর ব্যবস্থাপনা, আয়কর ও ভ্যাট সংস্কারের জন্য। শুধু আইএমএফ নয়, অন্যদের কাছেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কারা কী সাহায্য করবে, সেটা সমন্বয় করে আইএমএফকে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হবে। তাদের কাছ থেকে কী সাহায্য দরকার, তাও বলা হবে।”
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইএমএফের গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।