Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

‘উন্নয়নে শৃঙ্খলা’র কোপ পড়ছে দেড়শ প্রকল্পে

mop
[publishpress_authors_box]

দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় গত সরকারের শেষ সময়ে অনুমোদন পাওয়া নতুন প্রকল্পের পাশাপাশি চলমান প্রায় দেড়শ প্রকল্প বাদ পড়তে পারে। এরমধ্যে বেশিরভাগই হতে পারে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প।

আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে, বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া এসব প্রকল্পের বেশিরভাগের কাজ চলতি অর্থবছর শুরু হয়েছে। এছাড়া অনুমোদন পাওয়া যেসব প্রকল্পের অর্থছাড় শুরু হয়নি বা অল্প কিছু অর্থছাড় করা হয়েছে- সে ধরনের বেশিরভাগ প্রকল্প বাদ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “খাতভিত্তিক একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে কোন কোন প্রকল্প এডিপি থেকে বাদ দেওয়া হবে, সে তালিকা শিগগির চূড়ান্ত করা হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমরা তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রকল্পগুলো বাছাই করছি। প্রথম ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত প্রকল্পগুলো চলবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলো এখন যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় বন্ধ করে দেওয়া হবে। তৃতীয় ক্যাটাগরিতে বিগত সরকারের শেষ সময়ে বা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেওয়া প্রকল্পগুলো থেকে বাছাই করে বেশিরভাগ প্রকল্পই বাদ দেওয়া হবে।”

প্রকল্প বাদ দেওয়ার তালিকায় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে চলা বেশিরভাগই প্রকল্প বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্থায়নে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জনবান্ধব ও কর্মসংস্থান বান্ধব নয় এমন প্রকল্প বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

পুরো অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প ব্যয় ও উন্নয়ন ব্যয়ের বড় ভূমিকা আছে মন্তব্য করে উন্নয়ন ব্যয় সংকোচনে প্রকল্প কমিয়ে খাতটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “পরিকল্পনা কমিশনের প্রত্যেকটি প্রকল্পের সঙ্গে আগের প্রশ্নটাই জড়িত যে, প্রত্যেকটি প্রকল্পযাচাই-বাচাই করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ এই মুহূর্তে প্রকল্পগুলোর যা অবস্থা- এটা এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা। এখানে অনেকগুলো বিশৃঙ্খলা আছে।”

তিনি বলেন, “যে প্রকল্পগুলো আছে যেটা শুরুই হয়নি। কিছু আছে মাঝ পথে। কিছু আছে প্রায় সমাপ্তির পথে। আবার এক ধরনের প্রকল্প হলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেদের নির্বাচনী এলাকার জন্য। এখনও অপেক্ষমাণ অনেক প্রকল্প আছে, অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে– এগুলোকে আবার যাচাই-বাছাই করতে হবে।

“যেসব প্রকল্পের আসলেই কোনও অগ্রাধিকার নেই এবং এগুলো আসলেই কতটুকু সুবিধা বয়ে আনে এটা আমাদের অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মূল্যায়ন করতে হবে এবং এগুলো ছাঁটাই করতে হবে।”

পরিকল্পনা কমিশনের ওই কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে আরও বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন সেক্টর থেকে যেসব তালিকা পাচ্ছি সেই তালিকা উপদেষ্টার নির্দেশনার ভিত্তি করেই তিন ক্যাটাগরিতে প্রকল্পের তালিকা তৈরি করছি।”

তিনি জানান, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ছাঁটাইয়ে বিভিন্ন খাত থেকে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগ যাচাই-বাছাই করছে। শিগগরিই কতগুলো প্রকল্প বাদ দিতে হবে সেই তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের যে বাজেট পাস করেছে তাতে এডিপির তালিকায় মোট প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ৩২৬টি। গত জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় আরও ১১টি প্রকল্প। সে হিসাবে বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৩৭টি।

পরিকল্পনা কমিশনের এই কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে আরও বলেন, “এখন পর্যন্ত সেক্টরগুলোর পাঠানো তালিকা বিশ্লেষণ করে আমরা হিসাব করে দেখছি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্প বাছাইয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রকল্প বাদ পড়তে পারে। সে হিসাবে কম বেশি দেড়শ প্রকল্প তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ‘কার্যক্রম’ বিভাগের প্রধান খন্দকার আহসান হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুসারেজনগুরুত্ব নয় বা কর্মসংস্থান ও জনবান্ধব নয় এই রকম কিছু প্রকল্প বাদ দেওয়ার একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”

এরচেয়ে বেশি কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

পরিকল্পনা কমিশনের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সম্প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন- অপ্রয়োজনীয়, কম গুরুত্বপূর্ণ বা কর্মসংস্থান বান্ধব নয়, এই সুবর্ণ সুযোগ এসব প্রকল্প বাদ দেওয়ার।”

কোন সেক্টরের প্রকল্প বেশি বাদ দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে নির্দিষ্ট কোনও সেক্টরকে টার্গেট করে বাদ দেওয়ার নীতি নেওয়া হয়নি। বরং যেসব প্রকল্প কম গুরুত্বপূর্ণ বা সামান্য কাজ ঝুলিয়ে রেখে প্রকল্প জিইয়ে রেখেছে এমন প্রকল্প এবং জনবান্ধব নয় কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় গ্রহণ করা হয়েছে- এমন প্রকল্পই বাদ দেওয়ার তালিকাভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত আমাদের।”

‘অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের সুফল দ্রুত চায় নতুন সরকার

২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতুসহ আটটি প্রকল্প নেয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য, যেগুলো মেগা প্রকল্প নামেও পরিচিত। এর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প শেষ হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে। ছাড়া বাকি সাতটি প্রকল্পের কাজ চলছে দেশি-বিদেশি অর্থায়নে।

বৈদেশিক ঋণ সহায়তায় পরিচালিত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “বৈদেশিক ঋণে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের বিষয়ে সরকার আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা দেয়নি।

“অনেক দিন ধরে মেগা প্রকল্পগুলোয় দেশি-বিদেশি ঋণ নিয়ে অর্থায়ন করা হচ্ছে। অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ এখন শেষ দিকে। তাই দেশি ও বিদেশি ঋণ থেকে বিনিয়োগের সুফল পেতে চাই আমরা।”

এজন্য মেগা প্রকল্পগুলোকে দ্রুত শেষ করার করণীয় ‘শিগগিরই’ ঠিক করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

একনেক অনুবিভাগ থেকে ৫২ হাজার কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প ফেরত

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নির্দেশনা অনুযায়ী একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে একনেক অনুবিভাগ থেকে ১৩ প্রকল্প ফেরত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

এরমধ্যে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন বিভাগের প্রকল্প ৯টি এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকল্প ৪টি। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এরমধ্যে চারটি পুরাতন প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব ওঠার কথা ছিল উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ একনেকের সভায়।

নতুন প্রকল্প হিসেবে ৯টি প্রকল্প একনেক অনুবিভাগে পাঠানো হয়েছিল একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করতে। যেগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত