Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

কূপে গ্যাস থাকার পরও আগের সরকার কেন আমদানিতে ঝোঁকে, প্রশ্ন উপদেষ্টার

শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
[publishpress_authors_box]

দেশের কূপগুলোয় যথেষ্ট গ্যাসের মজুত থাকা সত্বেও শেখ হাসিনা সরকার এ খাতকে অবহেলিত রেখে কেন আমদানিনির্ভর জ্বালানির দিকে ঝুঁকেছিল—এ প্রশ্ন তুলেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, নিজেদের গ্যাস সম্পদের দিকে আগের সরকারের আরও বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল।  

সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।  

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় পরিকল্পনা উপদেষ্টার দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে।

বৈঠকে জ্বালানি খাতের তিন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এতোদিন এই গ্যাসের রিজার্ভগুলোর দিকে না তাকিয়ে আমরা কেন এলএনজি বা কয়লা আমদানির দিকে এতো বেশি ঝুঁকে গেলাম? ইম্পোর্ট হয় তো দরকার হতো। কিন্তু নিজেদের গ্যাস সম্পদের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল।”

জ্বালানি অনুসন্ধান ও উৎপাদনে নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড বা বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করা দরকার ছিল বলে মনে করেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “বাপেক্সের যদি সক্ষমতার অভাব থাকে, তাহলে বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করা দরকার ছিল। বিদেশে আমাদের অনেক বিশেষজ্ঞ আছে, যারা স্বেচ্ছায় দেশে এসে অনুসন্ধানের কাজগুলো করে দেবে। কিন্তু আমরা নিয়মনীতি ভাঙতে চাই না। নিয়মে আছে যে একটা থার্ড পার্টিকে ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার দিয়ে এনে এগুলো যাচাই-বাচাই করে তারপর কূপ খননে যেতে হবে।

“আমাদের দেখে মনে হয়েছে যে গ্যাস খাতকে অনেক দিন ধরে অবহেলিত রাখা হয়েছে। তাতে করে আমরা বেশি ঝুঁকে পড়েছি আমদানিনির্ভর জ্বালানির দিকে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “এই অল্প সময়ে বেশি কিছু করা যাবে না। কিন্তু এই কাজগুলো যদি শুরু করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কিন্তু আমাদের দেশে অনেক বেশি গ্যাস পাব এবং ব্যবহার করতে পারব। এটা ধারণা করা যায়।

“জ্বালানি খাতের তিনটি প্রকল্প ছিল। একটা ছিল অনুসন্ধান হয়ে গেছে, এখন কূপ খনন করতে হবে। আরেকটা ছিল কূপ খনন করে এখন গ্যাস উত্তোলন করতে হবে। এখানে এসে থেমে আছে। সেটা এখন কোথায় ব্যবহার করতে হবে, না কি ওটাকে পাওয়ার গ্রিডে দিতে হবে- ওটার জন্য কিছু যন্ত্রপাতি দরকার হবে।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের অনেক জায়গায় কিন্তু অনেক গ্যাস আছে। ভোলা অঞ্চলে অনেক গ্যাস আছে এখনও অনেক গ্যাসের রিজার্ভ আছে। বাপেক্সের মতে এগুলোতে সিসমিক অনুসন্ধান করলে এগুলোতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।

কিন্তু এগুলোতে আমাদের অনেক নিয়মনীতি আছে। এগুলোতো অনেক ব্যয় বহুল।

“কাজেই বিদেশি কোনও সংস্থা এসে আবার একটা থার্ড পার্টি দিয়ে অনুসন্ধান করবে আসলেই গ্যাস আছে কি না। উত্তোলন করার জন্য যে বিনিয়োগ দরকার সেটাও একটা ব্যাপার, কাজেই স্বল্প সময়ে অনেক দূর এগুনো যায় না।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একনেকের বৈঠকে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ৯৮ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি ৩৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।


অনুমোদিত প্রকল্পগুলো

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজিবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) নদী বন্দর নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প’, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প ‘আশুগঞ্জ-পলাশ সবুজ প্রকল্প’ ও ‘কুমিল্লা অঞ্চলে টেকসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প’, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কর্তন, পুনঃবাগান সৃজন ও রাবার প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়ন প্রকল্প’, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প ‘ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন প্রকল্প’, ‘রশিদপুর-১১ নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন প্রকল্প’ ও ‘২ডি সিসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ অ্যান্ড ৯ প্রকল্প’, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন প্রকল্প’ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (৪র্থ সংশোধিত) প্রকল্প’ ও ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প’।

এছাড়া, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার’ (১ম পর্যায়) প্রকল্পটি বাতিলের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং প্রকল্পটি বাতিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত