পরকীয়া নিয়ে হালে যতই হইচই হোক না কেন, বিয়ে প্রথা যখন থেকে চালু হলো পরকীয়ার শুরুও তখন থেকেই।
দাম্পত্যে অসুখী হলেই কি পরকীয়ার প্রবণতা বাড়ে? আসলে সুখী দাম্পত্য পরকীয়া থেকে দূরে থাকার মন্ত্র- এই কথায় খুব একটা ভরসা করা যায় না।
অ্যাংগার ম্যানেজমেন্ট এবং বিবাহ থেরাপি নিয়েও কাজ করেন সাইকোথেরাপিস্ট মোশে র্যাটসন।
সাইকোলজি টুডে ডটকমে এই প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “আমার অনেক রোগী তাদের দাম্পত্য জীবনে দারুণ সুখী হওয়ার পরও গোপন প্রণয় চালিয়ে যাচ্ছেন।
”তাদের কথা হলো, আমি যে সম্পর্ক করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম তা নয়। এই সম্পর্ক যেন সহজ ও সুন্দরভাবে আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল।”
আবার কেউ পরকীয়াতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাখ্যায় বলছেন, “আমি নিজেকে বেঁধে রাখতে পারিনি।” কেউ পরকীয়া সম্পর্কের স্বীকার করে জানাচ্ছেন, “আমার মনে কী ছিল আমি তা নিজেও বুঝতে পারিনি; আর তখনই ভুল করে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি।”
আসলে কী এমন ঘটে যে মানুষ এমন গোপন সম্পর্কে জড়িয়ে যায়? গাঢ় ভালোবাসা আর বিশ্বস্ত সঙ্গী থাকার পরও কেন কেউ পরকীয়া চালিয়ে যায়?
সবখানে নারী-পুরুষ
আজকাল নারী-পুরুষের যুগপৎ পদচারণা সবখানেই বেড়েছে। কর্মক্ষেত্র, ভ্রমণ এবং সামাজিক চলাফেরায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের। এমনকি প্রযুক্তি সুবিধা সহজ হয়ে যাওয়াতে, চাইলেই যৌনসম্পর্ক খুঁজে নেওয়া যায়।
নিজেকে ধরে রাখতে না পারা
আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণেও মানুষ দুটো সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে। দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে যে প্রাপ্তমনষ্ক আচরণ চাই তা না থাকাও আরেকটি কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া কম আত্মবিশ্বাসী লোকেরা কারও কাছ থেকে যতই ভালোবাসা পান, তা কমই মনে হয়। প্রতিদিন ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, প্রশংসা পেতে পেতে এসব খুব পরিচিত আর মুখস্ত কথা মনে হয়। এমন মানুষ এক সম্পর্কে সব পেয়েও তখন আরেক সম্পর্কে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কিন্তু এতেই যে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হবে, তা নাও হতে পারে।
রোমাঞ্চের খোঁজে
দাম্পত্য সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা দুজন একে অপরকে ঠিকই ভালোবাসেন; একে অপরকে ছেড়েও যাবেন না; কিন্তু এরাই আবার একটু নতুন উত্তেজনার খোঁজ করে দেখেন অন্যখানে।
দাম্পত্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকা
আপাতভাবে নির্ঝঞ্ছাট সংসার করে চলেছেন, অথচ নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে- এমন অনেক দম্পতি আছেন। এদের অনেকে একে অন্যের সঙ্গে শারীরিকভাবে অন্তরঙ্গ হওয়া নিয়েও মনোযোগ দেন না। মানসিক এবং শারীরিক সম্পর্কের এই ঘাটতি থাকলেই ওই দাম্পত্য সামাজিকভাবে যতই গোছানো দেখাক, তাতে পরকীয়ার সম্ভাবনা বাড়বেই। সংসার জীবনের ঘাটতিগুলো অন্য কোথাও থেকে পুষিয়ে নিতে ঝুঁকে যান তখন বিবাহিতরা।
অনেকদিনের সংসারে একঘেয়েমি
সংসারের চাল-ডাল, তেল-নুনের খবর রাখতে রাখতে নিজেদের জন্য বিশেষ দুটো কথা, একটু সময় আলাদা করতে ভুলে যান অনেকে। সংসার তখন শুধুই দায়িত্ব। এমনকি দাম্পত্যও তখন ছকে বাঁধা দায় হয়ে ওঠে। এই সময় নতুন কোনো সম্পর্ক আবারও নিজের দিকে ফিরে তাকাতে বলে।
মাদকাসক্তি
নেশাগ্রস্ত মানুষের বিবেচনা বোধ কাজ করে না বলে অনেক ভুল কাজই করতে পারে। কোথাও ঘুরতে গিয়ে অ্যালকোহল বা কোনো নেশা নিজের ইচ্ছেতে বা কারও প্ররোচনায় সেবন করার পর না চাইতেও সামনে থাকা কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে যেতে পারে। এরপর চেতনা ফিরে এলেও অনেকে এ ধরনের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না।
পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার
অতীতে ভয়াবহ কোনো অভিজ্ঞতা থেকে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) দেখা দিতে পারে। এতে মানুষের চিন্তার জগত ও আচরণ অদ্ভুত হয়ে ওঠে। এমন মানসিক সমস্যায় থাকা কেউ কেউ এক সম্পর্কে থাকারও পরও আরেকটি সম্পর্ক বেছে নিতে পারেন। নিজের ভেতরের ভয় তাড়াতেই এই পন্থা বেছে নেন তারা।
অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকেও পরকীয়া
মানুষ ভাবে এক কিন্তু কাজ করে আরেক; এমন অনেকের সঙ্গেই হয়। আচার-আচারণে সংযত মানুষেরও সবার আড়ালে পা পিছলে পড়ার একটা গল্প থাকতে পারে। সংসারে সব দিক থেকে ভীষণ দায়িত্বশীল থাকার পরও হয়তো মানুষের গোপন সম্পর্কও থাকতে পারে। হতে পারে কেউ কেউ সামাজিক প্রতিশ্রুতির জায়গায় সংসার করে চলেছেন; আর ব্যক্তিগত স্বস্তি পেতে পরকীয়া করছেন।
নিজেকে বুঝতে হবে সবার আগে
সংসারের বাইরেও আরেকটা সম্পর্কে জড়ানোর আগে সবার নিজের সঙ্গে বসা দরকার; নিজেকে প্রশ্ন করাও দরকার।
আপনি কি নিজের কষ্টের কথা জীবনসঙ্গীকে বলতে ভয় পান?
অনেকেই সুযোগ পেলে পরকীয়া করছে জেনে আপনারও আগ্রহ জাগছে?
বিবাহিত হওয়ার পরও আরেকজনের সঙ্গে জড়িয়ে গেলে সম্পর্কের অর্থ আপনার কাছে কী?
সম্পর্কে ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। আজকের দুনিয়ায় প্রেম, যৌনতা এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে মানুষের ভাবনার ধরন অনেক বদলে গেছে। এজন্য নিজের সঙ্গে বসে উপলব্ধি করা জরুরি, সম্পর্ক থেকে কী চাই আমরা?