ক্রিকেট বল হাতে নেন মাত্র তিন দিন। এ কদিনেই এক জায়গায় টানা বল করার সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম। এতে মুগ্ধ হন কোচ।
নাহিদ রানাকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটা নাটকীয়। টেপ টেনিস বলে গতির ঝড় তুলেছিলেন। গতিতে নাস্তানাবুদ উইকেটকিপার। বল ধরতেই পারছিলেন না। কোচ গিয়ে জানতে চাইলেন “ক্রিকেট বলেও এমন গতি তুলতে পারো?” নাহিদ বললেন “হ্যাঁ” এবং করেও দেখালেন। ব্যাস কপাল খুলে গেল নাহিদেরও।
শরিফুলের পর নাহিদকে নিয়ে কোচ কাজ শুরু করেন আলাদা ভাবে। কয়েক বছরের ব্যবধানে তার দুই বোলার এখন জাতীয় দলের পেস আক্রমণের ভরসা। এই কোচের নাম আলমগীর কবির। জাতীয় দলের সাবেক পেসার।
এখন তিনি বিসিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কোচ। একই সঙ্গে নারী যুব দলের বোলিং কোচও। উত্তরবঙ্গ থেকে পেসার তুলে আনার কাজটা দারুণ করছেন আলমগীর।
বেশিদিন আগের কথা নয়। সিলেট থেকে একসঙ্গে ৬ পেসার ছিলেন জাতীয় দলে ও পাইপলাইনে। আবু জায়েদ রাহি, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ, রেজাউর রহমান রাজা ছিলেন জাতীয় দলের অংশ। রুয়েল মিয়া ও তানজিম হাসান সাকিব ছিলেন পাইপলাইনে।
এদের মধ্যে আবু জায়েদ, রেজাউর জাতীয় দলের বাইরে চলে গেলেও তানজিম হাসান এখন সাদা বলে সেরা পেসারদের একজন।
আলমগীর কবির উত্তরাঞ্চল থেকে এমন পেসার বিপ্লব ঘটাতে চান। এখন শরিফুল-নাহিদ আছেন। জাতীয় লিগের এই মৌসুমে অভিষেক হয়েছে তার আরেক ছাত্র মোহাম্মদ ওয়ালিদের। রাজশাহীর হয়ে প্রথম ম্যাচেই ৭ উইকেট নিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই পেসার।
সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে আলোচনায় আলমগীর স্মৃতিচারণ করলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৫০.৯ কিলোমিটার গতিতে বল করা নাহিদকে নিয়ে, “নাহিদের সঙ্গে আমার দেখা হয় ঘটনাচক্রে। রাজশাহীর মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে একদিন আমরা কোচরা ছাত্রদের সঙ্গ খেলছিলাম। আমাদের একজন বোলার দরকার পরায় জুনিয়র গ্রুপ থেকে ওকে নিই। একজন বলেছিল ও খুব জোড়ে বল করে। দেখলাম সত্যিই তাই, ওর বল উইকেটকিপার ধরতে পারছিল না।”
আলমগীর যোগ করেন, “জিজ্ঞাসা করলাম ক্রিকেট বলেও কি এত জোড়ে বল করতে পারিস। সে বলল পারে। ওর ভাগ্য ভালো যে ওই সময় আমার চোখে পড়ে। এরপর ওকে নিয়ে কাজ শুরু করি, অ্যাকশনে কিছু ভুল ছিল তা ঠিক করি। আরও কিছু স্কিল নিয়ে কাজ করেছি। এরপর ধাপে ধাপে সে তার গতি দিয়েই নজর কেড়েছে।”
শরিফুলের উঠে আসাটা অবশ্য ঘটনাচক্রে নয়। এতদিনে প্রতিষ্ঠিত বোলার হয়ে ওঠা শরিফুল আলমগীরের চোখে পড়েন একটি ট্রায়ালে, “আমাদের ক্লেমন একাডেমির দিনাজপুর শাখায় একটি ক্যাম্পে ৬০-৭০জন পেসার ছিল। ওখানে শরিফুলকে দেখলাম একই জায়গায় একটানা বল ফেলে বাউন্স তুলছে। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম ক্রিকেট বলে কতদিন? সে বলল তিনদিন। অবাক হয়েছিলাম যে মাত্র তিনদিনে টানা এক জায়গায় বল করার কৌশল জানাটা আসলে দারুন ব্যাপার।”
“তো ওকে নতুন বল দিলাম, যেহেতু পেসার। দেখলাম একই জায়গায় বল ফেলছে ও বাউন্স তুলছে। ওই সময় ভাবলাম এই ছেলের ভেতর কিছু আছে, ওকে পিক করতে হবে। দিনাজপুর ক্লেমন একাডেমির কোচ ছিল ধীমান ঘোষ। তার সঙ্গে কথা বলে শরিফুলকে রাজশাহী ক্লেমন একাডেমিতে নিয়ে আসি। ভর্তি, বেতন, থাকা সব ফ্রি। অথচ এই ছেলেটির ভালা কেডসও ছিল না। এরপর সেই শরিফুল অনূর্ধ্ব-১৮ লিগে খেলে, পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার হয়ে খেলে সবার নজর কাড়ে।”
২০০১ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ২৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে আলমগীরের শুরু। প্রথম শ্রেনিতে আছে ৫৪ ম্যাচে ১৮২ উইকেট। লিস্ট এ-তে ২৫ ম্যাচে ৪০টি। জাতীয় দলের হয়ে তিন টেস্টের যাত্রা সুখকর না হলেও কোচ আলমগীর হাঁটছেন সাফল্যের সরনীতে। তার তুলে আনা বোলারদের কীর্তিতেই বেঁচে থাকতে চান এই পেস বোলিং কোচ।
নিজের পরিশ্রম ও সাফল্য প্রচারের আলোয় না এলেও কাজটা ভালোবাসেন তিনি, “এটা সত্যি কথা, জাতীয় দলে এসে পেসাররা বিদেশি কোচ পান। কিন্তু এই ছেলেদের ছোট থেকে তুলে আনা বড় বিষয়। জাতীয় দলের বিদেশী কোচরা পান একরকম তৈরি বোলার। এই ছেলেরা আমাদের মতো স্থানীয় কোচদের কাছে শিখেই কিন্তু বড় হয়। একটা পর্যায়ে গিয়ে জাতীয় দলে খেলে। এই ক্ষেত্রে স্থানীয় কোচদের অবদান আমি বলব অনেক বেশি।”
শরিফুল-নাহিদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রতিভা আছে। এদের তৈরি করার কাজ তাই সহজ হয়েছে বলে মনে করেন আলমগীর। নিজে পেসার হওয়ায় নতুন বোলার তুলতে অভিজ্ঞতাটাও কাজে লাগাতে পারছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তার সেরা সৃষ্টি নাহিদ রানা।