ভারতে হিন্দু ও মুসলমানদের সহাবস্থান ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একত্রে কাজ করার ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ওপর জোর দিলেন নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
সম্প্রতি আলিপুর কারা জাদুঘরে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণে ক্ষিতিমোহন সেনের ‘যুক্তসাধনা’ ধারণার ওপর আলোকপাত করে এই প্রসঙ্গটি সামনে আনেন তার তার নাতি অমর্ত্য।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, শতাব্দী ধরে হিন্দু ও মুসলমানরা সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার সঙ্গে কাজ করে আসছে। এটাই ক্ষিতিমোহন সেন তার বইয়ে ‘যুক্তসাধনা’ নামে অভিহিত করেছেন। বর্তমান সময়ে আমাদের সবার যুক্তসাধনার এই ধারণার ওপর জোর দেওয়া উচিৎ।”
ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন একজন বাঙালি গবেষক, সংগ্রাহক ও শিক্ষক। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তার ছেলে আশুতোষ সেনের ছেলে অমত্য সেন ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান।
অমর্ত্য সেন আরও বলেন, “ধর্মীয় সহনশীলতার মানে কেবল অন্য সম্প্রদায়কে বাস করতে দেওয়া ও তাদের মারধর না করা নয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়ত এটাই প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মানুষ এখন মারধরের শিকার হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি হলো সবাই মিলিত হয়ে কাজ করা।”
শিশুদের স্বাভাবিক নিরপরাধ প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, শিশুরা বিভাজনমূলক বিষাক্ত প্রভাবের বাইরে থাকে। বাজে শিক্ষার সংস্পর্শে না আসায় তারা সহজেই বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।
যুক্তসাধনার ওপর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়নের উদাহরণ তুলে ধরেন। এবিষয়ে তিনি বলেন, “ওস্তাদ আলী আকবর খান ও পণ্ডিত রবিশঙ্করকে কি তাদের ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে পৃথক করা যায়? তাদের নিজস্ব ধরনের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জন্য তাদের পার্থক্য করা যায়।”
ভারতের বহুত্ববাদী ঐতিহ্য রক্ষায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি মুঘল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে দারা শিকোহর উপনিষদের ফারসি অনুবাদের নজির তুলে ধরেন।
দারা শিকোহর প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, “হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও সংস্কৃত ভাষায় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন তিনি। তাজমহল এই জ্ঞানেরই প্রতিফলন। এটি শুধু একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, ভারতের বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু আজকাল দুই চিন্তাধারার মানুষ আমাদের ঐতিহ্য তাজমহলের বিরুদ্ধে কথা বলছে।”
তাজমহল নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন হতাশার সুরে বলেন, “একপক্ষ তাজমহলের অসাধারণ সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যের বিরুদ্ধে কিছু মত দিচ্ছে। আরেক পক্ষ বলছে, স্মৃতিস্তম্ভটির নাম পরিবর্তন করা উচিৎ, যাতে এর সঙ্গে একজন মুসলিম শাসকের সম্পর্ক না থাকে।”
তথ্যসূত্র : ইকোনোমিক টাইমস