Beta
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

সিনেমা শুধু জীবনই দেখায় না, পরিবর্তনও করে: অমিতাভ রেজা

rikshaw-girl-amitabh-reza-01
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মিতালি পারকিন্সের উপন্যাস অবলম্বনে অমিতাভ রেজা চৌধুরী নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ‘রিকশা গার্ল’। নিজের প্রথম ছবি ‘আয়নাবাজি’ দিয়ে বড়পর্দায় সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। এইবার তার নির্মাণে উঠে এসেছে রিকশা শিল্পী ও রিকশা শ্রমিকদের গল্প। চলচ্চিত্রটি মুক্তির দিন, সকাল সন্ধ্যার মুখোমুখি হলেন এ নির্মাতা।

সকাল সন্ধ্যা: অনেকদিন পর বড়পর্দায় আপনার নির্মিত চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে যাচ্ছে কেমন অনুভূতি?

অমিতাভ রেজা: যে কোন সিনেমা যখন বানাই তখন দর্শককে দেখানোর জন্য একটা এক্সাইটমেন্ট থাকে। এটা যখন দেখানোর জন্য প্রস্তুত করা হয় তখন এক ধরনের ভয় কাজ করে। ভীত সন্ত্রস্ত থাকি, কেমন লাগবে আসলে মানুষের, কেমন অনুভূতি হবে। সে অপেক্ষায় থাকি, সে অপেক্ষায় আছি। দেখা যাক, মানুষের ফিডব্যাক কী আসে! সেটা থেকে আমি হয়তোবা অনুপ্রাণিত হবো । ভালো করবার চেষ্টা করবো, যে ভুলভ্রান্তি আছে পরবর্তীতে সেটা যেন না থাকে। সেরকম একটা অনুভূতি নিয়েই আজকের দিনটা শুরু হয়েছে।

সকাল সন্ধ্যা: নানা আন্তর্জাতিক উৎসব ঘুরেছে ‘রিকশা গার্ল’। কেমন অভিজ্ঞতা ছিল?

অমিতাভ রেজা: অনেকদিন পর দেশের প্রেক্ষাগৃহে ‘রিকশা গার্ল’ দেখানো হচ্ছে। এর আগে দেশের বাইরে- জাপানে, আফ্রিকায়, ইউরোপের ব্রাসেলসে, জার্মানিতে দেখানো হয়েছে। নর্থ আমেরিকায় প্রিমিয়ার হয়েছে। আমেরিকার অনেকগুলো হলে সিনেমাটা চলেছে। সেখানে অনেক মানুষের ভালো লেগেছে, অনেক মানুষের সাধারণ লেগেছে।

সকাল সন্ধ্যা: এ সিনেমা নির্মাণের উদ্দেশ্য কী ছিল?

অমিতাভ রেজা: এ সিনেমাটি আমি বানিয়েছি শিশু-কিশোরদের জন্য। অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের ছবিটা দেখতে হলে নিয়ে যাবেন, এ আশা করছি। স্কুলের বাচ্চারা ছবিটা দেখবে, এবং আমাদের রিকশা পেইন্টিংস নিয়ে আগ্রহ বোধ করবে, এটাই ছিল চলচ্চিত্রটি নির্মাণের উদ্দেশ্য।

সকাল সন্ধ্যা: নির্মাণের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

অমিতাভ রেজা: যে কোন প্রজেক্ট যখন আমি করি, আইডিয়াটা এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করি। এ প্রজেক্টটা যখন আমি করতে গিয়েছি, রিকশা পেইন্টারদের নিয়ে যখন কাজ করতে গেছি, প্রভূত অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি অনেক কিছু জানতাম না রিকশা পেইন্টিং সম্পর্কে। এটা করতে গিয়ে আমি রিকশা পেইন্টারদের সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিকদের গ্যারাজে গিয়েছি, তাদের জীবন কেমন দেখেছি। সেখান থেকে আমি মানুষ হিসেবে অন্য মানুষ হতে পেরেছি বলে মনে হয়। সিনেমা শুধু জীবনই দেখায় না, পরিবর্তনও করে। ভাবনার পরিবর্তন করে, চিন্তার পরিবর্তন করে। এই রিকশা পেইন্টারদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমারও এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আমিও ঋদ্ধ হয়েছি এই মানুষদের সাথে কাজ করে, কথা বলে।

সকাল সন্ধ্যা: যদি জিজ্ঞাসা করি, কেন দেখবে দর্শক ‘রিকশা গার্ল’?

অমিতাভ রেজা: এই সিনেমা মানুষ এ জন্য দেখবে যে, এর মধ্যে একটা গল্প আছে। গল্পটা অনেক ইন্সপায়ারিং। এটা হিরোর জার্নির গল্প। এই জার্নির মধ্যে মানুষ যদি নিজেকে কল্পনা করে, তখন মানুষ তার নিজের জীবনের অনেক লড়াই আছে, সেসব লড়াই অতিক্রম করতে সাহস পাবে- সে যেটা চায় সে সেটা করতে পারে ইচ্ছা করলে। সেরকম একটা জায়গা থেকে ‘রিকশা গার্ল’ নির্মাণ করা।

সকাল সন্ধ্যা: রিকশা শ্রমিকরা কী দেখতে পাবে তাদের নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র?

অমিতাভ রেজা: অবশ্যই এদেশের রিকশা শ্রমিকদের নিয়ে একটা শো করার ইচ্ছা আছে। সেটা আমরা করবো, সেটার জন্য আয়োজন করা হচ্ছে। আমি চাই একটা শো, রিকশা শ্রমিকরা যেন দেখতে পারে। আমি একটা গান করেছি রিকশা শ্রমিকদের নিয়ে। সিনেমাটা তারা দেখুক এটা চাই।

সকাল সন্ধ্যা: রিকশা শ্রমিকরা কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল আপনার নির্মাণে?

অমিতাভ রেজা: আমাদের দেশে রিকশা শ্রমিকরা শুধু যে রিকশা চালায় সেটাই নয়। তাদের রাজনৈতিক একটি গুরুত্বও রয়েছে। আমরা জানি উনসত্তুরের গণভ্যুত্থানের একটা মূল অংশ শুরুই হয়েছিল রিকশা শ্রমিকদের মাধ্যমে। একইভাবে চব্বিশের গণভ্যুত্থানেও আমরা দেখেছি রিকশা শ্রমিকরা কিভাবে ক্যাটালিস্ট হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। তারা শুধু আহত-নিহতদের নিয়ে যাতায়াত করেনি, তারা একসময় সাপোর্ট দিয়েছে। আমি এখনো ভুলতে পারি না স্যালুট দেয়া সেই ছবিটার কথা। এটা রিকশা শ্রমিকদের ট্রিবিউট দেয়ার মতো একটা সিনেমা। তাদের জন্য সিনেমাটি বানিয়েছি। চেষ্টা করবো তাদেরকেই সিনেমাটি বেশি বেশি করে দেখাতে। টিকেট এবং এমন কিছু ব্যবস্থা করা যায় কিনা যাতে সহজে তারা সিনেমাটি দেখতে পারে।

সকাল সন্ধ্যা: দর্শকদের জন্য কী বলবেন?

অমিতাভ রেজা: শুধু রিকশা শ্রমিক নয়, আমাদের দেশের মধ্যবিত্তসহ সব শ্রেণির দর্শকদের জন্যই ছবিটা উপভোগ্য হতে পারে। আপনারা সিনেমাটি দেখুন, দেখে আমাকে ভুল-ত্রুটি জানান। সিনেমাটি যদি আপনাদের বিনোদিত করে তাহলেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে। একজন ফিল্ম মেকারের এর চেয়ে বেশি চাওয়ার থাকে না। আসুন সিনেমা হলে, ‘রিকশা গার্ল’ পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করুন।

যেসব প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে ‘রিকশা গার্ল’
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত সম্ভার, এসকেএস টাওয়ার ও সনি স্কয়ারের ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’ শাখায়। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’, কেরানীগঞ্জের ‘লায়ন সিনেমাস’, ঢাকার ‘শ্যামলী সিনেমা’, যমুন ব্লকবাস্টার, সিলেটের ‘গ্র্যান্ড সিলেট মুভি থিয়েটার’, বগুড়ার ‘মম ইন’, পাবনার ‘রূপকথা সিনেমা’ ও রাজশাহীর ‘গ্র্যান্ড রিভারভিউ সিনেপ্লেক্স’-এ মুক্তি পেয়েছে এটি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত