সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতায় হত্যার পর খুনিরা ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবুর ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের দাবি। বাবুকে গ্রেপ্তারের পর সেই ফোনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হলো দুটি পুকুরে। আর এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর রশীদ।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আনার খুনের পর খবর গত ২২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানানোর পর বাংলাদেশেও তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আনারের লাশের সন্ধানে কলকাতায়ও ঘুরে এসেছিলেন হারুন।
তদন্তের এক পর্যায়ে গত ৬ জুন ঝিনাইদহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক বাবুকে, যিনি এলাকায় গ্যাস বাবু নামে পরিচিত। এরপর আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের করা মামলায় তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
ডিবি কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, গত ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুনের পর খুনিরা দেশে বাবুর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে বাবু সেই ফোনটি ফেলে দেন এবং ফোন হারিয়েছে দাবি করে থানায় জিডিও করেন।
সেই ফোনের খোঁজে বুধবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে ঝিনাইদহে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে নামেন ডিবি কর্মকর্তা হারুন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শহরের পায়রা চত্বরে আনা হয় বাবুকে।
প্রথমে পায়রা চত্বরের উত্তর পাশের একটি পুকুরে জেলে নামিয়ে ফেলে দেওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারে চলে তল্লাশি। এরপর শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় আরেকটি পুকুরে তল্লাশি চালানো হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, আনার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ যে ফোনে করেছিলেন বাবু, তা তিনি পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন।
ডিএমপি-ডিবির সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহের বিচার বিভাগীয় হাকিম ফারুক আযম, ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আবিদুর রহমান, সদর থানার ওসি শাহীন উদ্দিন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ২টার দিকে দুই পুকুরেই তল্লাশি শেষ হয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এবিষয়ে কিছু বলা না হলেও উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফোন কিংবা কোনও আলামত পাওয়া যায়নি।
অভিযান শেষের আগে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন সাংবাদিকদের বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডে মোট সাতজন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
“তারা সাগরে বা মাটির নিচে যেখানেই থাকুক না কেন, আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব। কোনও ভালো মানুষকে হয়রানি করা হবে না এবং অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
ঝিনাইদহে তিনি একথা বলার মধ্যেই মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজী নামে দুজনকে খাগড়াছড়ি থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা দুজন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে ডিবির দাবি।
বাংলাদেশে ডিবি শুরুতেই গ্রেপ্তার করেছিল শিমুল ভুইয়া, তার ভাতিজা তানভির ভূইয়া এবং শিলাস্তি রহমান নামে এক তরুণীকে। এরপর বাবুর পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ডের হোতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহিন; তিনি শিমুল ভূইয়াকে ভাড়া করেন আনারকে খুনের জন্য।