Beta
বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

রোবট দিয়ে স্টেন্ট পরানো হাতের চেয়ে ‘নিখুঁত’

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গত ২১ জানুয়ারি দুই রোগীর এনজিওপ্লাস্টি হয় রোবটের মাধ্যমে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গত ২১ জানুয়ারি দুই রোগীর এনজিওপ্লাস্টি হয় রোবটের মাধ্যমে।
[publishpress_authors_box]

ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশেরোবটিক এনজিওপ্লাস্টি (রোবট দিয়ে হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট) চলছে। বাংলাদেশে তা প্রথম হলো। তার নেতৃত্বদানকারী চিকিৎসক বলছেন, মানুষের হাতের চেয়েও নিখুঁতভাবে কাজটি করা গেল রোবটের মাধ্যমে। এতে সময়ও লেগেছে কম।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গত ২১ জানুয়ারি আধুনিক প্রযুক্তির এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে দুই রোগীর এনজিওপ্লাস্টি হয়। এর মধ্য দিয়ে রোবটিক এনজিওপ্লাস্টি যুগে পা রাখল বাংলাদেশ।

এই চিকিৎসক দলের প্রধান ছিলেন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার সরকার। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, বাংলাদেশে প্রথম হলেও বিশ্বের ১৬০টি দেশে রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি সেন্টার রয়েছে। ভারতেই রয়েছে ছয়টি।

বর্তমানে হৃদরোগ হাসপাতালগুেলার ক্যাথল্যাবে চিকিৎসকরা রোগীদের হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বা রিং পরান। কিন্তু রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টিতে কাজটি করা হয় রোবটের মাধ্যমে।

কীভাবে কাজটি করা হয়- তা তুলে ধরে ডা. প্রদীপ বলেন, “রোবটের একটি হাত থাকে ল্যাবে, আরেকটি থাকে কন্ট্রোল ইউনিটে, যেটা নিয়ন্ত্রণ করেন চিকিৎসকরা। আর এভাবেই কন্ট্রোল সেকশন থেকে পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করেন চিকিৎসকরা।

“এই চিকিৎসা ব্যবস্থার বড় সুবিধা হচ্ছে, হার্টের রিং পরানোর জটিল প্রক্রিয়াটি রোবটের মাধ্যমে খুব সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে করা যায়। অনেক সময়ই রিংটি নিখুঁতভাবে পজিশন করার জন্য এক মিলিমিটার সামনে কিংবা পেছনে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। হাত দিয়ে করলে নিখুঁতভাবে এই কাজটি করা কঠিন হয়, কিন্তু রোবটের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে এটি সম্পন্ন করা সম্ভব।”

প্রচলিত এনজিওপ্লাস্টিতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগলেও রোবটের মাধ্যমে আধা ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে তা শেষ করা যায় বলে জানান তিনি।

এর আরেকটি বড় সুবিধা চিকিৎসকরাও পাচ্ছেন জানিয়ে ডা. প্রদীপ বলেন, “ক্যাথল্যাবের রেডিয়েশনের কারণে অনেক চিকিৎসক ব্রেন ক্যান্সার ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়েন।

“এছাড়া চিকিৎসকরা যখন অপারেশন থিয়েটার বা ক্যাথল্যাবে কাজ করেন, রেডিয়েশন প্রটেকশনের জন্য তাদের ১২ থেকে ১৫ পাউন্ড ওজনের একটি বিশেষ জামা দীর্ঘক্ষণ পরতে হয়, যাতে তাদের ঘাড়ের নার্ভে চাপ পড়ে এবং পরবর্তীতে চিকিৎসক খুব বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘাড় ও হাতে ব্যথার কারণেএনজিওপ্লাস্টি করতে পারেন না।”

বর্তমানে অনেক ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট এই সমস্যার কারণে চিকিৎসা দিতে পারছেন না বলে জানান ডা. প্রদীপ। তার ভাষ্যে, এখন সেই সমস্যা থেকে চিকিৎসকরা মুক্তি পেতে পারেন। রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রেডিয়েশন ছাড়া এবং ভারী পোশাক ছাড়াই ক্যাথল্যাবের কন্ট্রোলরুম, হাসপাতালের বাইরে কিংবা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া গেলে একজন চিকিৎসক দেশের বাইরে থেকেও রোগীর এই অস্ত্রোপচার করতে পারবেন।

হৃদযন্ত্রের এই অস্ত্রোপচার করাতে যারা এখন দেশের বাইরে যান, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যদি এটা চালু করা সম্ভব হয়, তাহলে রোগীরা দেশেই এই চিকিৎসা নিতে পারবেন।

এই যন্ত্রটি কোথা থেকে কীভাবে আনা হয়েছে- জানতে চাইলে ডা. প্রদীপ বলেন, “মেশিনটি এক মাস ব্যবহারের জন্য ফ্রান্স থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। দেশে অবকাঠামোর সঙ্গে এই মেশিন সহায়ক কি না, সেটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এক মাস পর এটি ফেরত পাঠানো হবে।”

৬৫ বছরের আজম আলী এবং ৫৪ বছরের মোরশেদুল আলমের ধমনীতে রোবটিক পদ্ধতিতে স্টেন্ট পরানো হয়েছে। তারা দুজনই সেরে উঠেছেন এবং বাড়ির পথে রওনাও হয়েছেন।

প্রথম আজম আলীর এই অস্ত্রেপচার হয়। তার সঙ্গে বুধবার যখন সকাল সন্ধ্যার কথা হয়, তিনি তখন কুষ্টিয়া গ্রামের বাড়ির পথে ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে মনিরুল ইসলাম।

মনিরুল বলেন, “বাবার হার্টের সমস্যা ছিল গত কয়েকবছর ধরেই। কিন্তু তার জটিলতা শুরু হয় দুই থেকে আড়াই মাসের মতো হবে। তখন প্রথম কুষ্টিয়া, এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান না হওয়াতে এই হাসপাতালে আসি। সেটা ১৫ দিনের মতো হবে।

“এরপর স্যার (ডা. প্রদীপ সরকার) আমাদের রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির কথা বলেন। আমরা রাজি হই কিছু না ভেবেই। অপারেশনের পর বাবা সুস্থ মানুষের মতো কথা বলতে একটুও সময় নেয়নি।”

ডা. প্রদীপ বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, আগামী কয়েকদিনে এ ধরনের ১০টি এনজিওপ্লাস্টি আমরা করব। এরমধ্যে কোনওটিতে রোগী থাকবে ক্যাথলাবে, আমরা থাকব হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে; আরেকটি হবে রোগী থাকবে ক্যাথলাবে, আমরা থাকব পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সুবিধাসহ হাসপাতালের বাইরে। সেটা যে কোনও জায়গা হতে পারে। এগুলো সাকসেসফুল হলেই আমরা হৃদরোগ চিকিৎসায় সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে পারব, এটা দেশের ইতিহাসে একটা যুগান্তকারী ঘটনা হবে।”

সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হলে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের জন্য এই যন্ত্র কেনার সুপারিশ সরকারকে করা হবে বলে জানান এই চিকিৎসক।

তিনি বলেন, “পরবর্তীতে জেলা শহর নিদেনপক্ষে বাকি সাত বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এই যন্ত্র দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। তাতে করে পঞ্চগড়ের একজন রোগীকে সময়-অর্থ ব্যয় করে ঢাকায় আসতে হবে না, তিনি দিনাজপুর মেডিকেলে গেলেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাবেন।”

“একজন হৃদরোগীর জন্য এই সময় বাঁচাতে পারা মানেই জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ, এতেই রোগী অনেকখানি এগিয়ে থাকবেন,” বলেন ডা. প্রদীপ। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত