ক্ষমতা থাকাকালে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ১৪৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
আনিসুল হক ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে অসাধু উপায়ে জ্ঞাতআয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৬ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জনপূর্বক দখলে রেখেছেন বলে মামলায় বলা হয়েছে।
মামলায় আনিসুল হকের নিজের ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৩৪৯ কোটি ১৫ লাখ ২১ হাজার ৫৮২ টাকা জমা ও ৩১৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৬০৮ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ৬৬৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ১৯০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগও আনা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪- এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
খ্যাতনামা আইনজীবী সিরাজুল হকের ছেলে আনিসুল হক ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া ও কসবা) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেবারই মন্ত্রী হন তিনি। তারপর ২০১৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি টানা আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ১৩ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে তার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় আনিসুল হককে। গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করার কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে।
দুদকের মামলায় আনিসুল হকের সম্পদের বিষয়ে বলা হয়েছে, তিনি নিজের নামে ৯৩ লাখ ১১ হাজার ৮৫৮ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। সেগুলো হচ্ছে রাজধানীর বনানীতে বাড়ি, ময়মনসিংহে এক একর ও ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি এবং পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৮ কাঠার প্লট।
আনিসুল হকের ১৫১ কোটি ৯২ লাখ ৫৬ লাখ ৪৪৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, তার নামে সিটিজেন্স ব্যাংককে ৪০ কোটি টাকা ও এক্সিম ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার রয়েছে। তিনি গুলশানে একটি বাড়ি কেনার জন্য অগ্রিম ৫৫ লাখ টাকা দিয়েছেন; বনানীতে আরেকটি বাড়ির জন্য অগ্রিম দিয়েছেন ২ কোটি টাকা।
মামলায় বলা হয়েছে, আনিসুল হকের নামে সাড়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের পাঁচটি গাড়ি, ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র, অগ্রণী ব্যাংকের বনানী শাখায় ৫০ লাখ টাকা জমা, ব্র্যাক ব্যাংকের বনানী শাখায় ৫০ লাখ টাকা জমা, একই ব্যাংকে ২ কোটি টাকা গোল্ডেন ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মোট ৭১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে তার।
নাটোরের সাবেক এমপি বকুলের বিরুদ্ধে মামলা
নাটোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বিরুদ্ধে ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪৫ টাকার জ্ঞাত
আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।
সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, বকুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ৮টি ব্যাংকে ২৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগও আনা হয়েছে মামলায়।