Beta
সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫

অঞ্জনার শোকে কাঁদছে চলচ্চিত্রাঙ্গন

Anjana feature final
[publishpress_authors_box]

বাংলা সিনেমার স্বর্ণসময়ে রুপালি জগতের সুপারস্টার নায়িকা অঞ্জনা রহমানের মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়েছে চলচ্চিত্র অঙ্গন। শোক জানিয়েছে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠন ও তার সান্নিধ্য পাওয়া তারকারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে তারকাদের পাশাপাশি ভক্তদেরও শোক জানাতে দেখা গেছে।

চিত্রনায়িকা শাবনূর লিখেছেন, “আমার অগ্রজ সহকর্মী, জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ও নৃত্যশিল্পী শ্রদ্ধেয় অঞ্জনা রহমান। আমাদের সকলের প্রিয় অঞ্জনা আপার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করা গুণী এই শিল্পীর অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।”

চিরনিদ্রায় শায়িত অভিনেত্রী অঞ্জনা

নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস অঞ্জনা অভিনীত অশিক্ষিত চলচ্চিত্রের গান ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইসে গানটির প্রথম দু’টি কলি শেয়ার করে লিখেছেন, “আশা ফুরানোর আগেই আপনার জীবন ফুরিয়ে গেলো, নয়ন জুড়ানোর আগেই আপনার নয়ন চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো! আপনি চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। আমার বাবা’র (দিলিপ বিশ্বাস) পরিচালিত ‘জিঞ্জির’, ‘আনারকলি’ এবং ‘অংশীদার’ এই তিন তিনটি সুপারহিট চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী হয়ে আপনি ছিলেন আমার বাবা-মা’র অতি আপন তথা আমাদের পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এরপর আমার কর্মজীবনে কত শত অনুষ্ঠানে আপনার সাথে দেখা হওয়া, একসাথে কাজ করার সৌভাগ্য হওয়া, সবই স্মৃতি হয়ে গেলো! কোন মৃত্যুই কাম্য নয়! কিন্তু প্রবীণ হয়েও এত উচ্ছ্বল, চঞ্চল, আনন্দদায়ক নবীন প্রাণের অকালপ্রয়াণ মেনে নেয়া ভীষণ কষ্টকর!”

অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় তার নেয়া অঞ্জনার একটি তথ্যবহুল সাক্ষাৎকার শেয়ার করে লিখেছেন, “আজ থেকে ঠিক বছরখানেক আগে অঞ্জনা আপার এই ইন্টারভিউটা অনেক তথ্যের ভান্ডার। উনি হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলমান ধর্মে এসেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত একজন মুসলমান হয়েই থেকে গেলেন। যে কারণে আসা হয়েছিল সেই কারণ তার পাশে না থাকলেও তিনি মুসলমান থেকে আর পূর্বের ধর্মে ফিরে যান নি। এত ছবির নায়িকা হওয়া সত্ত্বেও তিনি নৃত্যশিল্পী পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। একটু সহজ সরল মানুষ ছিলেন কিন্তু মনটা ছিল খুব পরিষ্কার। অকপটে বলে গেলেন তার নানান অভিজ্ঞতার কথা। আমার মনে হয় উনার জীবদ্দশায় সবচেয়ে ম্যাচিউর ইন্টারভিউ এটি ছিল।”

জয় আরও লিখেছেন, “আজকাল কত মানুষ কাজ করে এই অঙ্গনে। কিন্তু একজন অঞ্জনার মত এত এত অর্জন কজনে করতে পারে? এই অর্জন হয়তো পুরোটাই দর্শকের কিংবা অন্য মানুষের জন্য না। হয়তো নিজের জন্যই । হয়তো একটু ভালো থাকার জন্যই, এবং একটু সম্মান পাওয়ার জন্য। ভালো থাকা এবং সম্মানটা অনিশ্চিত হয়ে গেলে শিল্পী তখন বাঁচে না। সব শিল্পী থাকুক দুধে ভাতে। সব শিল্পী বেঁচে থাকুক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।”

নির্মাতা ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পরিচালিত প্রথম ছবি নান্টু ঘটকের নায়িকা ছিলেন অঞ্জনা। নির্মাতা আর বেঁচে নেই। কিন্তু তার সন্তান শরাফ আনোয়ার উৎপল ও সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার স্মরণ করেছেন অঞ্জনাকে। শোক জানিয়ে উৎপল লিখেছেন, “প্রিয় অঞ্জনা আন্টি, ওপারে ভালো থাকবেন। আমার বাবা গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘নান্টু ঘটক’ (১৯৮২) এর নায়িকা ছিলেন অঞ্জনা আন্টি। এছাড়া আমার বাবা পরিচালিত ‘বিচারপতি ’ (১৯৮৬) ছবিরও নায়িকা ছিলেন। তাছাড়া আমার বাবা প্রযোজিত ‘জিঞ্জির’ (১৯৭৯) ও ‘আনারকলি’ (১৯৮০) ছবিরও নায়িকা ছিলেন। পারিবারিকভাবেই অঞ্জনা আন্টির সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক নিবিড় ছিলো।”

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন নির্মাতা ছটকু আহমেদ, চয়নিকা চৌধুরী, জয়া আহসান, বিজরী বরকত উল্লাহ, মুক্তি, জায়েদ খান প্রমুখ। তাকে হাসপাতালে দেখতে ছুটে গেছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর, প্রযোজক খসরু আহমেদসহ অনেকেই। এফডিসিতে তার শবদেহের পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন সহকর্মী চিত্রনায়িকা নতুন।

আরও পড়ুন অঞ্জনা: আড়ালে রইল যে পরিচয়

শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন অনেকেই

শোক জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি বাচসাস। শোক বার্তায় বাচসাসের সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ ও সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল বলেন, ‘সদা হাস্যোজ্জ্বল গুণী অভিনেত্রী অঞ্জনার মৃত্যুতে চলচ্চিত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা আর পূরণ হবার নয়। আমরা এই গুণী মানুষের মৃত্যুতে তার আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। অভিনেত্রী অঞ্জনা শুধু আমাদের সজন নন, অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দেশ তথা দেশের মানুষকে ঋণী করে রেখেছেন। অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি ‘পরিণীতা’, ‘মোহনা’ ও ‘রাম রহিম জন’ সিনেমার জন্য তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।”

১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরীর সেতু চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয় জীবনে পথচলা শুরু করেন অঞ্জনা। তবে তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত দস্যু বনহুর । এই সিনেমাতে তার বিপরীতে ছিলেন সোহেল রানা।

প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেত্রী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো- সুখের সংসার, যাদু নগর, সখী তুমি কার, নেপালী মেয়ে, রাখে আল্লাহ মারে কে, একই রাস্তা, অঙ্কুর, মাধবীলতা, জবরদস্ত, জিদ্দী, আশীর্বাদ, শাহী কানুন, রূপসী বাংলা, বাপের বেটা, মরুর বুকে, প্রমাণ, বিক্রম, আকাশপরি, রাজার রাজা, বিধিলিপি, দিদার, আনারকলি, অগ্নিপুরুষ, টার্গেট, মহারাজ, মানা, আশার প্রদীপ, প্রতিরোধ, বেদনা, সোনার পালঙ্ক, চোখের মনি, প্রেমের সমাধি, ঈমানদার, অংশীদার, সুখ, দোযখ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত