Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

চোখ বেঁধে নির্যাতন, অভিযোগ আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এখন হাসপাতালে রয়েছেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এখন হাসপাতালে রয়েছেন।
[publishpress_authors_box]

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কয়েকজনের খোঁজ মিলছিল না, পরে তাদের পাওয়া গেছে আহত অবস্থায়।

তারা বলছেন, মূলত ১৯ জুলাইয়ের পর তাদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সরকারি বাহিনী, নির্যাতন চালিয়ে পরে ছেড়ে দেয়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্য আন্দোলনকারী কোনও নেতাকে ধরে নেওয়ার কথা স্বীকার করা হয়নি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের শুরুতে রাজপথে আন্দোলন শুরু হলেও তা সংঘাতে গড়ায় ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীরা আক্রান্ত হওয়ার পর।

১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বাত্মক অবরোধ ডেকেছিল; তারপর সহিংসতা সারাদেশে ছড়ায় ব্যাপক মাত্রায়। তাতে পাঁচ দিনে দেড় শতাধিক নিহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সরকার।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের রায় হয়, তার আলোকে কোটা সংস্কার করে সরকারের প্রজ্ঞাপনও আসে। তখন কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের মুখপাত্রদের অনেকের অনুপস্থিতি দেখা যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোট সমন্বয়ক ৬৫ জন। যারা প্রকাশ্যে আসছিলেন তারা অভিযোগ করেন, তাদের অনেক সহকর্মীকে পাওয়া যাচ্ছে না।

শুরু থেকে এই আন্দোলনে মুখপাত্র হিসাবে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। ১৯ জুলাইয়ের পর তারও খোঁজ মিলছিল না। পরে জানা যায়, তাকে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ার একটি বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়।

আরও দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদকে রামপুরা মহানগর আবাসিক এলাকা এবং আবু বাকের মজুমদারকে ধানমণ্ডি থেকে তুলে নেওয়া হয় বলেও জানা যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা জুলাইয়ের শুরু থেকে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে আসছিল। ফাইল ছবি

চোখ বেঁধে নির্যাতন, অভিযোগ নাহিদের

গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় খবর আসে নাহিদ ইসলাম চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। হাসপাতালে গিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের কালসিটে দাগ দেখা যায়।

নাহিদ বিছানায় শুয়ে শুয়েই বলেন, “আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় ছিলাম। রাত ২টা থেকে ৩টার দিকে সেখানে পুলিশ আসে। মানে আমাকে বলা হয়, পুলিশ বা ডিবি কেউ আসছে আমার খোঁজে।”

তখন ওই বাড়ির ছাদে চলে গিয়েছিলেন নাহিদ। সেখানে গিয়েই তাকে ধরা হয়।

নাহিদ বলেন, “কয়েকজন ছাদে এসে আমাকে জোর করে নিচে নামায়। সেখানে এসে আমি ৩-৪টা গাড়ি দেখতে পাই। সেখানে পুলিশের গাড়িও ছিল। এছাড়া প্রাইভেটকার আর মাইক্রো ছিল।”

গাড়িতে তুলেই চোখ বেঁধে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে এই তরুণ বলেন, “৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের মতো গাড়িটা চলেছিল। ওখান থেকে আমাকে একটা বাসার রুমে নেওয়া হয়। সেখানে গিয়েই কিছু জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল ওরা আন্দোলন সম্পর্কিত।”

এরপরই মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন শুরু হয় নাহিদের ওপর।

“তারা এক পর্যায়ে আমাকে মারা শুরু করে। আমি এই পুরো ঘটনা বেশিক্ষণ নিতে পারি নাই। একপর্যায়ে সেন্সলেন্স হয়ে পড়ি। এরপর আর কোনকিছু আমার মেমোরিতে নেই। সবই আবছা।”

কী দিয়ে মারা হয়- জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, “লোহার কিছু একটা দিয়ে মেরেছে। কখনও দাঁড় করিয়ে মারছিল, কখনও বসিয়ে। গালি গালাজ করছিল আর মারছিল।”

কারা ছিল তারা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওরা কী বলছিল, তা আমি বুঝতেও পারছিলাম না। অনেকে অনেক ধরনের কথা বলছিল। এমন একটা পরিস্থিতি ছিল, আমার মাথা কাজ করছিল না।”

কীভাবে পূর্বাচলে পৌঁছালেন- জিজ্ঞেস করলে নাহিদ বলেন, “হঠাৎ আমি বুঝতে পারি, আমাকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে আবার। তারপর আমি ভোর ৪-৫ টার দিকে নিজেকে পূর্বাচলে একটি ব্রিজের নিচে আবিস্কার করি। আশপাশের সাইনবোর্ড দেখে আমি বুঝি এটা পূর্বাচল। কিছুক্ষণ পর আলো ফুটলে আমি একটু হেঁটে সিএনজি নিয়ে বাসায় আসি।

“এর মধ্যে আমার পরিবার থানা, ডিবি, সিআইডিতে গিয়ে আমাকে খুঁজেছে। কিন্তু তারা স্বীকার করেনি।”

আসিফকে প্যাথিডিন প্রয়োগের অভিযোগ

গত ১৯ জুলাই রাত ১১টায় রামপুরা আবাসিক এলাকা থেকে আসিফ মাহমুদকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তিনি।

বুধবার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “গত ১৯ জুলাই রাত ১১টায় আমাকে হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিতে চাপ দেওয়া হয়। না মানায় ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস (অচেতন) করে রাখা হয়।

“এই চার-পাঁচ দিনে যতবার জ্ঞান ফিরেছে, ততবার ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। আজ বুধবার বেলা ১১টায় আবার একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়।”

আসিফ মাহমুদ এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আসিফ মাহমুদকে হাতিরঝিল থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান আন্দোলনকারীদের আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।

তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “গুম করে বার বার প্যাথেডিন ইনজেকশন দিয়ে স্লো পয়েজনিং করা হয়েছে আসিফ ভাইকে। এন্টি প্যাথেডিন দিয়ে ডিটক্সিফিকেশনের ট্রিটমেন্ট চলছে।”

বাকের মজুমদারকে ১৯ জুলাই ধানমণ্ডি থেকে তুলে নেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে চোখে কালো কাপড় বেঁধে একটি কক্ষে ফেলে রাখা হয়েছিল পাঁচদিন।

বুধবার তিনি ফেইসবুকে বলেন, “আমাকে ১৯ জুলাই সন্ধ্যার পর ধানমণ্ডি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং আন্দোলন বন্ধে স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিতে বলায় আমি অস্বীকৃতি জানালে একটা অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখে। যে এলাকা থেকে তুলে নেয়, তার পাশের এলাকায় আমাকে চোখ বেঁধে ফেলে যায়।

“আমি এখন আমার পরিবারের সাথে নিরাপদে আছি। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আপনাদের সামনে সবিস্তারে সব বলব।”

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানিয়েছেন। তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “গুম হতে হতে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম।

“সমন্বয়কদের সিদ্ধান্ত মেনেই আমি নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিলাম। তারপর এই সাপ-লুডুর জীবন। আজ এর বাড়ি তো কাল ওর বাড়ি। এর মধ্যে যতবার ফোন কানেক্ট করার চেষ্টা করেছি, ততবারই ফোন ট্র্যাকিংয়ের শিকার হয়েছি। জানি না, কতক্ষণ নিরাপদে থাকব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত