Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

কক্সবাজার হাসপাতালের সংকট আপাতত কেটেছে

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকসহ ১৯৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকছেন বলে সোমবার জানানো হয়েছে। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকসহ ১৯৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকছেন বলে সোমবার জানানো হয়েছে। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, কক্সবাজার

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, কক্সবাজার

কক্সবাজার জেলার চিকিৎসা সেবা নিয়ে সাম্প্রতিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আপাত অবসান ঘটেছে। রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের বরাদ্দ অর্থে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে দেশি-বিদেশি এনজিওর নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মী থাকছেন আরও ৬ মাস।

অর্থ বরাদ্দ না থাকায় রবিবার শেষ হয়েছিল ৬টি দেশি-বিদেশি এনজিও পরিচালিত প্রকল্পের মেয়াদ। এনিয়ে কক্সবাজার জেলাজুড়ে চিকিৎসা সেবা বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়।

সোমবার সকালে বিশ্ব ব্যাংক জেলাবাসীর সেই শঙ্কা কাটায়। আর্থিক সংস্থাটি এদিন সকালে এক ই মেইলে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্পের (এইচজিএস) অধীনে আন্তর্জাতিক ও দেশি ৬টি এনজিও জেলাব্যাপী হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল নিয়োগসহ নানা সহায়তা দিয়ে আসছে।

অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এসব হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনজিওর নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যাহারের চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের নানা পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানায়।

২০১৯ সালের জুলাইয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে কক্সবাজার জেলায় চিকিৎসাসেবাকেন্দ্রিক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব নেয়।

২০২১ সাল পর্যন্ত আইসিআরসি এই দায়িত্ব পালন করে। এরপর বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে আইওএম, ইউনিসেফ-পিএইচডি, ইউএনএফপিএ, শেড, অ্যাকশনএইড ও ইউনিসেফ-এসএএম এই ছয়টি দেশি-বিদেশি সংস্থা কক্সবাজার জেলার হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকে।     

বিশ্ব ব্যাংকের ই-মেইলে বলা হয়েছে, আগের মতো আগামী ৬ মাসও আন্তর্জাতিক ও দেশি এনজিওগুলো এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এরপর এ প্রকল্প বিশ্ব ব্যাংকের অধীনে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (আইএসও) যাতে বাস্তবায়ন করে, সেই চুক্তি করা হচ্ছে।

আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে আইএসও কক্সবাজার জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ প্রকল্পের দায়িত্ব পাবে এবং এটি ধারাবাহিক থাকবে।

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগ পাওয়া জনবল ছাড়াও বিশ্ব ব্যাংকের অধীনে চিকিৎসকসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

তারা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সেন্টমার্টিন হাসপাতাল ও জেলার ৭২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়োজিত আছেন।

এদের মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আছেন ১৯৯ জন। এছাড়া উখিয়া হাসপাতালে ৯২ জন, টেকনাফ হাসপাতালে ৮০ জন, সেন্টমার্টিন হাসপাতালে ১৬ জন, পেকুয়া হাসপাতালে ৫২ জন ও চকরিয়া হাসপাতালে ৪৬ জন আছেন।

এছাড়া ৭২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩ শতাধিক কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন।

শঙ্কামুক্ত হয়েছে কক্সবাজারের চিকিৎসাসেবা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

রবিবার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পদায়ন করা চিকিৎসকসহ ১৯৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকলে হাসপাতালটির বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে উদ্বেগে ছিলেন হাসপাতালটি চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। চিন্তিত ছিলেন জেলার মানুষও।

তাদের আশঙ্কা ছিল, জনবলে ঘাটতি দেখা দিলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবায় নেমে আসবে বিপর্যয়। বন্ধ হয়ে যেতে পারে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ), করোনারি কেয়ার ইউনিটসহ (সিসিইউ) গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেখা দেবে সংকট।   

সোমবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আশেকুর রহমান।

তিনি বলেন, “প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক বা জনবল দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায় স্বস্তি পাচ্ছি।”

এতে ২০২২ সালে সরকার ঘোষিত সারা দেশের মডেল হাসপাতাল কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ডা. আশেকুর রহমান।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নিয়োগকৃত জনবল দিয়ে হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মানের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা, ওষুধ প্রদান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নিবিড় শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র, আইসিইউ, সিসিইউ ও ২৪ ঘণ্টার প্যাথোলজি ব্যবস্থা আছে।

“এসব কারণেই এটি মডেল হাসপাতাল। জনবল না থাকলে তা রক্ষা করা যেত না। প্রকল্পের মেয়াদ ৬ মাস বাড়ার খবর স্বস্তির। এর ধারাবাহিকতা যেন থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”

এনজিওর ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে প্রশ্ন

জেলা সদর হাসপাতালের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে এনজিওর ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ বা চিকিৎসাসেবা কেন এনজিওর প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল হবে-এ প্রশ্ন অনেকের মতো তুলেছেন স্থানীয় সামাজিক সংগঠন মুক্তকেন্দ্র কক্সবাজারের সমন্বয়ক রিদুয়ান আলী।

তার দাবি, সরকারি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ জনবল নিয়োগ সরকারিভাবে হতে হবে। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ সরকারই দেবে।

সরকারি চিকিৎসা সেবা শতভাগ সরকারের অধীনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালও।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ অর্থের ২৫ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর। এই অর্থ সরাসরি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে জমা হতে হবে। সরকারই বাস্তবায়ন করবে জনবল নিয়োগসহ সব কার্যক্রম। আন্তর্জাতিক বা দেশি এনজিওর অধীনে এসব বাস্তবায়ন করা যাবে না। এনজিওর ওপর নির্ভরশীলতা শুভ নয়।”

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, “সবসময় এনজিওর ওপর নির্ভরশীলতা থাকবে না। এটা কেটে যাবে। বিশ্বব্যাংকের অধীনে আইএসওকে নিয়ে চুক্তি করা হচ্ছে।

“জানুয়ারিতে এই চুক্তি হলে আইএসওর মাধ্যমে সরাসরি জনবল নিয়োগসহ স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি দেখবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত