‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ তৈরির কাজটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে নিলেও তাতে কোনও অগ্রগতি না দেখে হতাশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
এই ঘোষণাপত্র দ্রুত তৈরির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এবিষয়ে সমর্থন সৃষ্টির লক্ষ্যে জনসংযোগের ডাক দিয়েছে সংগঠন দুটি। আগামী ৬-১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী এই জনসংযোগ চলবে।
শনিবার ঢাকার বাংলামটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীও ছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে এই নাগরিক কমিটি গঠিত হয়। দুটি সংগঠন একসঙ্গে কাজ করছে, তাদের অফিসও ঢাকার বাংলামটরে রূপায়ন টাওয়ারে।
গত ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপনে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকেছিল।
তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারাই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। তখন পিছু হটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
হাসনাত আবদুল্লাহ শনিবারের সংবাদ সম্মেরনে বলেন, “জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি বিশ্বাস করে, ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ ঘোষণা এবং বাস্তবায়ন করবে সরকার।”
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে প্রান্তিক জনপদ থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ থাকার বিষয়টি দেখিয়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি, এই ঘোষণাপত্রে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।”
এলক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আগামী ৬-১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে জানিয়ে হাসনাত বলেন, “এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে লিফলেট বিতরণ, সভা-সমাবেশ করে জনমত গড়ে তোলা হবে। ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশনে’ মানুষ কী দেখতে চায়, তা জানতে তাদের কাছে আমরা ছুটে যেতে চাই।”
দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্র, পেশাজীবী, কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে একযোগে এই গণসংযোগ চালানো হবে বলে জানান হাসনাত।
অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণাপত্র তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও গত চার দিনে তাদের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন হাসনাত।
তিনি বলেন, “আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ সরকার ঘোষণা করবে বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সরকার এখন পর্যন্ত এবিষয়ে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেয়নি।”
গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অংশীজনের মতামত নিয়ে এই ঘোষণাপত্র তৈরির আহ্বান জানিয়ে হাসনাত বলেন, “সরকার যেহেতু নিজ উদ্যোগে এই দায়িত্ব নিয়েছে, এই জাতীয় বিষয়ে সরকার যেন তৎপর হয়, সেজন্য আমরা যৌথভাবে তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
এ ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের মতামত জানাতে প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের একটি খসড়া ছিল। সেটি নয়, বরং সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে পরে যে খসড়া করা হয়েছে, সেটি উপস্থাপন করা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন বলেন, “গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র উপহার দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন। আমরা দেখেছি, সেখান থেকে উত্তোরণের জন্য চব্বিশে ছাত্ররা বুক পেতে দাঁড়িয়েছে, রক্ত দিয়েছে, অসংখ্য ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে।
“৫৩ বছরের অকার্যকর রাষ্ট্র থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের স্বীকৃতির জন্য এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য একটি ‘প্রক্লেমেশন’ দিতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সরকার থেকে পরে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি আমাদের অর্জন মনে করি।”
সরকারের কোনও উদ্যোগ না দেখার প্রতিক্রিয়ায় নাসীরুদ্দীন বলেন, “আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার যেন দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়। তারা যেন ঘোষণাপত্র তৈরিতে সব রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের শক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বসে।”
ঘোষষণাপত্রের জন্য যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে, সেটি দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হবে জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “প্রত্যেকটি পাড়া-মহল্লা, স্কুল-কলেজ, কল-কারখানা সব জায়গায় একযোগে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জাতির সামনে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে।”