মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বুথিডং শহরাঞ্চলটি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাজ্যটির জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।
শনিবার জান্তা সরকারের কৌশলগত সামরিক কমান্ডের পতনের পর উত্তর রাখাইনের শহরটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে এসেছে বলে জানিয়েছে এএ।
আরাকান আর্মি বলছে, শনিবার তারা লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ২৩৪, ৩৪৫, ও ৩৫২ এবং আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন ৩৭৮ ও একটি লজিস্টিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নসহ বুথিডং শহরাঞ্চলের অবশিষ্ট জান্তা দুর্গগুলোও দখলে নিয়েছে।
বুথিডং শহরের বাইরেও পিছু হটতে থাকা জান্তা সেনা ও তাদের সহযোগী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে। রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একাংশ জান্তার পক্ষে লড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এএ জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে তারা বুথিডং শহর এলাকার চারটি লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর এবং দুটি সীমান্ত চৌকি দখল করেছে।
এর আগে গত ২ মে এএ শহরাঞ্চলটির অপারেশন কমান্ড ১৫ দখল করে। সেসময় তারা জান্তা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সহ শত শত সৈন্যকে বন্দী করে।
৩ মে এএ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৫১১ হেডকোয়ার্টার দখল করে। আর ৬ মে জান্তা সেনারা শহরের প্রবেশপথে একটি প্রধান সড়ক সেতু উড়িয়ে দেয়।
এএ মার্চ ও এপ্রিলে বুথিডং শহরাঞ্চলে তিনটি লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর দখল করে।
থান্ডে শহরাঞ্চলেও এএ ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। সেখানে পর্যটন গন্তব্য এনগাপালি সমুদ্র সৈকত অবস্থিত।
এএ বলেছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে তারা রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরাঞ্চলের মধ্যে ৭টি, অন্যান্য এলাকার তিনটি শহর এবং বেশ কয়েকটি কমান্ড সেন্টার সহ প্রায় ১৮০টি জান্তা ঘাঁটি দখল করেছে। এছাড়া প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পুরো পালেতোয়া শহরাঞ্চলটিও তাদের দখলে।
পরাজিত জান্তা বাহিনী এএর নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রাম, হাসপাতাল, স্কুল এবং ধর্মীয় স্থানসহ বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা করছে।
কাচিনে জান্তার হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি কেআইএর
কাচিন রাজ্যের ওয়াইংমো শহরাঞ্চলে শনিবার জান্তার নতুন ঘাঁটিতে হামলার সময় একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিতের দাবি করেছে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ)।
কেআইএ জানায়, তারা ও তাদের সহযোগীরা শনিবার ওয়াইংমো শহরাঞ্চলের ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩২১ এর সদর দপ্তর এবং ১০টি জান্তা ফাঁড়িতে হামলা চালায়।
কেআইএর মুখপাত্র কর্নেল নাও বু ইরাবতীকে বলেছেন, “আমরা শুনেছি যুদ্ধে জান্তার একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে আমাদের সেনারা এখনও তা নিশ্চিত করতে পারেনি।”
কেআইএর দাবি, ২০২১ সালের পর থেকে তারা একটি যুদ্ধবিমানসহ কমপক্ষে তিনটি সামরিক বিমানকে গুলি করে ভুপাতিত করেছে।
কর্নেল নাও বু জানান, কেআইএ শনিবার সকালে ওয়াইংমোতে দুটি জান্তা ফাঁড়ি এবং টহল পোস্ট দখল করেছে।
শ্বে নিয়াংবিন গ্রামের পদাতিক ব্যাটালিয়ন ৩২১ এবং ১০টি ফাঁড়ি ওয়াইংমো-মাইটকিনা সড়কের পাশেই অবস্থিত। সড়কটি লাইজা শহরের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করে, যেখানে কেআইএ সদর দপ্তর অবস্থিত।
কেআইএ ও তাদের সহযোগীরা বলেছে, ৬ মে তারা গিডনের প্রধান ফাঁড়ি এবং ৫ মে আরও কয়েকটি শক্তিশালী ঘাঁটি দখল করে।
শুক্রবার সকালে মানসি ও মোমাউক শহরাঞ্চলের জান্তা ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরেও কেআইএর অভিযানের ফলে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এসময় জান্তা সরকার বিমান হামলা করে প্রতিক্রিয়া জানায়।
কেআইএ, কাচিন পিপলস ডিফেন্স ফোর্স ও আরাকান আর্মি যৌথভাবে লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩১৯ ও ৬০১ এবং মানসিতে দুটি আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন ও মোমাউকের লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৪৩৭-এ হামলা করছে।
মোমাউক ও মানসীতে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরটি ভামোতে জান্তার ক্ষমতার মূল কেন্দ্র। সোমবার মোমাউকে জান্তার বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০টি বাড়ি ও একটি স্কুল ধ্বংস হয়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “শুক্রবার বিমান হামলায় মোমাউকের একটি বাজার ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া ১০০টিরও বেশি বাড়ি এবং অন্যান্য ভবন ধ্বংস হয়েছে।”
৭ মার্চ থেকে কেআইএ ভামো-মিটকিনা রোড বরাবর মোমাউক, ওয়াইংমো, মাইটকিনা, মানসি, সুমপ্রবুম ও তানাই শহরাঞ্চলে কমপক্ষে ১১টি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর সহ ৯০টিরও বেশি জান্তা ফাঁড়ি ও ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে।
চীন সীমান্তের দাউথপোনিয়ান, লুয়েগেল, সিনবো এবং সুমপ্রাবম শহরগুলোও দখল করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইরাবতী