টানা ১৬ বছর ধরে কারাগারে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একের পর এক মামলায় খালাস পাওয়ার পর কারামুক্ত হলেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরণ করেন।
এরপর মিছিল নিয়ে তিনি যান শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি।
সাদা পাঞ্জাবি, সাদা টুপি, চোখে চশমাধারী ৬৬ বছর বয়সী বাবর হাত উঁচিয়ে চলছিলেন ছাদখোলা গাড়িতে। গাড়িটির চারপাশ ঘিরে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা।
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডিত বাবর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে একটানা কারাগারে ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটার পর হাই কোর্টের রায়ে দুই ঘটনার মামলায়ই খালাস পান তিনি।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক জান্নাতুল ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার আদালত থেকে রিলিজ অর্ডার আসার পর লুৎফুজ্জামান বাবরকে মুক্তি দেওয়া হয়।
লুৎফুজ্জামান বাবর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ এবং ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠনের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান বাবর। তখন তিনি বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর তার মুখে উচ্চারিত ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’ কথাটি ছিল ব্যাপক আলোচিত। ওই বছরের অক্টোবরেই চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক হয়েছিল।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ওই বছরের ২৮ মে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বাবর। তবে ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি। তবে পরাজিত হন।
তবে সেবার বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন বাবর। সেই কারণে ভোটের কয়েকদিন আগে ২৭ ডিসেম্বর দল থেকে বহিষ্কৃতও হন তিনি। তখন তিনি দলের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
তবে নির্বাচনের এক বছর পর ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি বাবরের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়। সেই সিদ্ধান্ত জানানোর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল- “তিনি নিষ্ঠা ও দক্ষতা দ্বারা আগামীতে দলের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে অবদান রাখবেন বলে দল আশা করে।”
এদিকে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় আসামি করা হয় তাকে, তখন পুনরায় গ্রেপ্তার হন তিনি।
এরপর ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর ২১ আগস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে বাবরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায়ও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি। অভ্যুত্থানের পর ২০০৪ সালে হাই কোর্টের রায়ে দুটি মামলায়ই খালাস পান তিনি।
এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলা এবং সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পান তিনি।