স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার।
এসপি বাবুলের জামিন চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানি শেষে বুধবার বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
হাইকোর্টে তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুরুল আলম।
এই জামিনের পর বাবুল আক্তারের মুক্তিতে আর কোনও বাধা নেই বলে জানান তার আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি বলেন, ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করার পাশাপাশি বাবুল আক্তারকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত।
এর আগে বেশ কয়েকবার বাবুল আক্তার জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর হয়।
শিশির মনির বলেন, “বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে যে কয়েকটি মামলা আছে সেগুলোর কোনোটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, কোনোটিতে তিনি আগেই জামিনে আছেন। তাই এ জামিনের পরে তার কারাগার থেকে মুক্তিতে আর কোনও বাধা থাকল না।”
আদালত কোন যুক্তিতে জামিন দিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ মামলায় তার (বাবুল আক্তার) কোনও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। তিনি ৩ বছর ৭ মাস ধরে কারাগারে আছেন, এসব বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।”
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার ছিলেন। ওই ঘটনার কিছুদিন আগেই এসপি বাবুল চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন। তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
সাড়ে তিন বছর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেও ডিবি পুলিশ কোনও কূলকিনারা করতে না পারায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই।
এরপর ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের ‘লোক মারফত তিন লাখ টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।
পরে বাবুলের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। তবে সেই মামলা আদালতে না টেকায় বাবুলের মামলাটিই পুনরুজ্জীবিত হয়।
মাহমুদা হত্যার ঘটনায় ২০২১ সালের ১২ মে বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তাতে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১০ অক্টোবর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।
গত বছরের ৯ এপ্রিল মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরই মধ্যে মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মামলার মোট ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।