Beta
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘ভালা পোলা গেলো, লাশ অইয়া আইলো’

শান্ত
নিহত মোহাম্মদ শান্ত
[publishpress_authors_box]

মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও ভিডিও কলে কথা বলেছেন ছেলের সঙ্গে। তখনো মা জানতেন না, সেটাই ছেলের সঙ্গে শেষ কথা।

ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের একজন শান্ত। ভবনের একটি রেস্তেরাঁয় সহকারি শেফ (বাবুর্চি) হিসেবে কাজ করতেন। সংসারের হাল ধরতেই নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড় থেকে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।

স্বজনরা জানান, গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ওয়াফেল বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে চাকরি করতেন শান্ত। তার বাবা আমজাদ হোসেন সৌদি আরবে কাজ করেন। তবে তার একার আয়ে সংসার না চলায় লেখাপড়া ছেড়ে হাল ধরতে হয় বাড়ির বড় ছেলে শান্তকে।

মাত্র আট মাস আগে ওই রেস্তোরাঁয় চাকরি নিয়ে ঢাকায় আসেন ২৩ বছরের শান্ত। কেবল পরিবারকে সাহায্য করতেই নয়, নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপও ছিল তার এই চাকরি।

দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মোহাম্মদ শান্ত সবার বড়। ছোট ভাই প্রান্ত হোসেন এইএচএসসি পরীক্ষার্থী। একমাত্র বোন আমেনা আক্তার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

বৃহস্পতিবার রাতে আগুন নেভানোর পর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মধ্যরাতে সেখানেই শান্তর লাশ খুঁজে পান স্বজনরা। শুক্রবার দুপুরে জানাযা শেষে ভূঁইগড় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

ঘটনায় আকস্মিকতায় প্রিয়জনরা বুঝে উঠতে পারছেন না কিছু। থামছে না মা লিপি বেগমের কান্নাও।

ছেলের স্মৃতি মনে করে বিলাপ করছেন তিনি। বারবার বলছেন, শেষবার ভিডিওকলে কথার প্রসঙ্গে।

কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, “দুইদিন আগে তার বাড়িতে আসার কথা ছিল। কিন্তু কাজের জন্য আসতে পারে নাই। বলছিল, শুক্রবার বাড়িতে আসবো। আমার ভালা পোলা গেলো, লাশ অইয়া আইলো।”

বিলাপ আর থামে না শান্তর মায়ের।

ছোট ভাই প্রান্ত হোসেন জানান, রাতে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে মা ঘুমাতে চলে যান। রাত ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকার বেইলি রোডের ওই ভবনে আগুন লাগার খবর দেখতে পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ের মোবাইলে ফোন করেন, কিন্তু নম্বরটি বন্ধ পান। এরপর শান্তর আরেক সহকর্মীকে টেলিফোন করলে সেটি একজন পুলিশ কর্মকর্তা ধরেন। তিনি জানান লাশ রয়েছে হাসপাতালে।

এরপর দ্রুত তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান বলে জানান প্রান্ত।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে আগুন লাগে। ভবনটিতে কাচ্চি ভাইসহ বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান, মোবাইল ফোন ও কাপড়ের দোকান ছিল।

ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত