ফুটবলে এখন প্রচুর খেলা। সংখ্যাটা এত যে, ইউরোপের খেলোয়াড়রা আন্দোলনে নামার ঘোষণা পর্যন্ত দিয়েছেন। দেশ ভেদে প্রতিযোগিতার নাম ভিন্ন হলেও খেলা একটাই- ফুটবল। এত সংখ্যার মাঝে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ‘বিশ্বকাপ’। ব্যক্তিগত পুরস্কারেও আছে নানা নামের আয়োজন। তবে মর্যাদার বিচারে ব্যালন ডি’অর রাখা হয় সবার ওপরে।
বছরঘুরে আবার এলো ব্যালন ডি’অর। যে পুরস্কারের দৌড়ে ২০০৩ সালের পর প্রথমবার নেই লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। যেখানে নতুন কারও হাতে শোভা পেতে যাচ্ছে সোনার বল।
ব্যালন ডি’অর কী
ফুটবলে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে সেরার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। ফ্রান্সের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফ্রান্স ফুটবল’ সেই ১৯৫৬ সাল থেকে পুরস্কারটি দিয়ে আসছে। তবে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটি ছিল শুধুমাত্র ইউরোপে জন্ম নেওয়া ফুটবলারদের জন্য। ১৯৯৫ সাল থেকে ইউরোপের বাইরের খেলোয়াড়দের জন্যও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় পুরস্কারটি। আর প্রথম সংস্করণেই ব্যালন ডি’অর জেতেন লাইবেরিয়ান কিংবদন্তি জর্জ ওয়েহ।
এবারের আয়োজন কখন কোথায়
বাংলাদেশ সময় সোমবার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১-৪৫ মিনিটে প্যারিসের থিয়েটার ডু শাতেলে শুরু হবে অনুষ্ঠান। এখানেই ঘোষণা করা হবে ফরাসি ম্যাগাজিন ‘ফ্রান্স ফুটবল’-এর দেওয়া পুরস্কারটির বিজয়ীর নাম। ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা আগেই জানিয়ে দিয়েছে আয়োজকরা।
কীভাবে নির্ধারণ হয় বিজয়ী
ব্যালন ডি’অর তিনটি প্রধান মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেওয়া হয়:
১. ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স, ফল গড়ে দেওয়ার সামর্থ্য ও আকর্ষণীয় ফুটবলের প্রদর্শনী।
২. দলীয় পারফরম্যান্স ও সাফল্য।
৩. খেলোয়াড়ি মান ও ফেয়ার প্লে।
ছেলেদের ব্যালন ডি’অরে সাংবাদিকদের বিশেষ জুরি কাজ করে থাকে। কোন সাংবাদিকরা থাকবেন, সেটা চূড়ান্ত হয় ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে। যখন ব্যালন ডি’অরের প্রক্রিয়া শুরু হয়, সেসময় ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে যে ১০০ দেশ থাকে, ওই দেশগুলোর সংবাদিকদের নিয়ে গড়া হয় আন্তর্জাতিক জুরি। তাদের সঙ্গে থাকেন ফরাসি সংবাদ মাধ্যম লেকিপের সম্পাদকীয় সদস্য ও আগেরবারের সেরা জুরি সদস্য।
জুরি সদস্যরা ফ্রান্স ফুটবলের গড়ে দেওয়া ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে পছন্দ অনুযায়ী ১০ জন খেলোয়াড়কে নির্বাচন করতে পারেন। প্রত্যেকে মেধার ক্রমানুসারে ১০ খেলোয়াড় বাছাই করতে পারেন। নির্বাচিত ১০ খেলোয়াড়কে ক্রমানুসারে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়… এভাবে দশম পর্যন্ত পছন্দ অনুযায়ী সাজিয়ে পয়েন্ট দিতে পারেন জুরি সদস্যরা। ক্রমানুসারে পয়েন্টের হিসাবটা এমন- ১৫, ১২, ১০, ৮, ৭, ৫, ৪, ৩, ২ ও ১। পয়েন্টের হিসাবে যে খেলোয়াড় সবার ওপরে থাকবেন, তিনি জিতবেন ব্যালন ডি’অর।
টাই হলে…
দুই বা অধিক খেলোয়াড়ের পয়েন্ট সমান হলে কী হবে? সেক্ষেত্রে ‘টাই’ ভাঙতে খেলোয়াড়ের প্রথম ভোটের অবস্থান দেখা হবে। যে খেলোয়াড়কে জুরি সদস্যরা সবচেয়ে বেশি ‘এক নম্বর’ অবস্থানে রেখেছেন, তিনি জিতবেন ব্যালন ডি’অর। সেখানেও সমান হলে দ্বিতীয় স্থানে যাকে বেশি রাখা হয়েছে, তিনি জিতবেন পুরস্কার। তারপরও ‘টাই’ না ভাঙলে একইভাবে ভোটের অবস্থান বিবেচনা করে বিজয়ী নির্বাচন করা হবে।
ট্রফি কি রাখতে পারেন খেলোয়াড়
‘ফ্রান্স ফুটবল’ প্রতিবছর নতুন ট্রফিতে অনুষ্ঠান সাজায়। প্রতিবারই অনুষ্ঠানে থাকে আসল ট্রফি। ফলে যে খেলোয়াড় ব্যালন ডি’অর জেতেন, তিনি আসল ট্রফি নিয়েই বাড়ি ফেরেন। এমনকি চাইলে আরও দুটি রেপ্লিকা নিতে পারেন আয়োজকদের কাছ থেকে।
এবার জিতবে কে?
স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা জানতে পেরেছে ২০২৪ সালের ব্যালন ডি’অর উঠছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের হাতে। ওদিকে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলতির বিশ্বাস, বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডই পাচ্ছেন। শুধু মাদ্রিদভিত্তিক পত্রিকা কিংবা রিয়াল কোচ নন, বেশিরভাগ ফুটবল বিশ্লেষক ভিনিসিয়ুসকে ফেভারিট মানছেন।
গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগা জিতেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ৫-২ গোলে হারানোর পথে হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই ফরোয়ার্ড। তার ওই পারফরম্যান্সের পর কোচ আনচেলত্তি বলেছিলেন, “ভিনিসিয়ুস জিততে যাচ্ছে (ব্যালন ডি’অর)। অবশ্যই এই তিন গোলের জন্য নয়, কারণটা হলো ওর পারফরম্যান্স।”
অবশ্য ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে তাকে যেতে হচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার স্মৃতি নিয়ে। গত শনিবার এল ক্লাসিকোতে ঘরের মাঠেই ৪-০ গোলে হেরেছে রিয়াল।
ম্যানচেস্টার সিটির রোদ্রিও আছেন ফেভারিটের তালিকায়। গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন। এ বছর স্পেনের ইউরো জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
ভিনিসিয়ুস ও রোদ্রির সঙ্গে লড়াই হতে পারে আরেক রিয়াল খেলোয়াড় জুড বেলিংহামের। গত মৌসুমে রিয়ালের সাফল্যে তার অবদানও অনেক।
শেষ পর্যন্ত কার হাতে উঠতে যাচ্ছেন ব্যালন ডি’অর, সেটা জানতে আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা।