সিরিজ বাঁচাতে জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মন্দ ছিল না। নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে একসময় বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত মিলেছিল। তবে মাঝের ওভারগুলোতে আফগানিস্তানের বোলাররা ফিরে আসায় পাল্টে যায় হিসাব। এরপরও বাংলাদেশের স্কোর আড়াই’শ ছাড়িয়েছে অভিষিক্ত জাকের আলির শেষের ঝড়ে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে করেছে ২৫২ রান। অধিনায়ক শান্তর ৭৬ রানের ইনিংসে পাওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে শেষ দিকে জাকের খেলেছেন অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংস।
১৮৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। অভিষিক্ত জাকের বাদে আর কোনও বিশেষজ্ঞ ব্যাটার ছিলেন না। অথচ সপ্তম উইকেট জুটিতেই আসে ৪৬ রান। জাকেরের সঙ্গে সমানতালে ব্যাট করে নাসুম আহমেদ খেলে যান ২৪ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৫ রানের ইনিংস। এরপর তাসকিন আহমেদকে নিয়ে জাকের যোগ করেন আরও ২২ রান।
ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে রান আড়াই’শ পার করেন এই অভিষিক্ত ক্রিকেটার। জাকের ২৭ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন হার না মানা ৩৭ রানের ইনিংস। তাসকিন অপরাজিত ছিলেন ২ রানে।
আফগানদের সবচেয়ে সফল বোলার নেঙ্গেলিয়া খারোটে। বাঁহাতি স্পিনার ৮ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ১০ ওভারে ৩৫ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন আরেক স্পিনার এএম গাজানফার।
শান্ত-মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে বড় ধাক্কা
সত্যিকার অধিনায়কের মতো বুক চিতিয়ে লড়াই করে যাচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। স্বপ্ন দেখছিলেন সেঞ্চুরির। কিন্তু ভুল শট নির্বাচনের খেসারত দিতে হলো তাকে। অধিনায়কের বিদায়ের পরপরই প্রায় একই শট খেলে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ। দ্রুত ২ উইকেট হারানোয় বড় ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশ দলে।
নেঙ্গেলিয়া খারোটের স্পিনে এলোমেলো বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। এই স্পিনার ১০ রানের মধ্যে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। শুরুটা করেছিলেন তাওহিদ হৃদয়কে দিয়ে। ১১ রান করা ডানহাতি ব্যাটারকে ক্যাচ বানান সেদিকউল্লাহ আতালের হাতে।
পরের ওভারে বোলিংয়ে ফিরে ৪ বলের ব্যবধানে তুলে নেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহর উইকেট। ওয়ান ডাউনে নামা শান্তর ব্যাটে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। দারুণ কিছু শটে সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎই উড়িয়ে মারতে চাইলেন তিনি। সেটির চড়া দাম দিতে হয়েছে। খারোটের বল মাঝ ব্যাটে না লাগায় লং অফে মোহাম্মদ নবির সহজ ক্যাচ হয়ে শান্ত ফেরেন প্যাভিলিয়নে। ১১৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৭৬ রান করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
শান্তর বিদায়ে এমনিতেই ছন্দপতন ঘটে, সেখানে মাহমুদউল্লাহ দলের হাল ধরবেন কী উল্টো অপ্রয়োজনীয় শট খেলে তিনিও আউট। ওই খারোটের বল লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়েন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের হাতে। মাত্র ৩ রানে শেষ হয় মাহমুদউল্লাহর ইনিংস।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে বাংলাদেশ হারায় ষষ্ঠ উইকেট। স্কোর ৪৭ ওভারে ৬ উইকেটে ২২৩ রান।
রশিদের গুগলিতে ঘায়েল মিরাজ
বাউন্ডারি নয়, সিঙ্গেলসে ভর করে ইনিংস সাজাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাবধানী ব্যাটিংয়েও শেষরক্ষা হলো না তার। রশিদ খানের গুগলি পড়তে না পেরে বোল্ড হয়ে গেছেন ডানহাতি ব্যাটার।
সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে সিঙ্গেলসে জোর দিয়েছিলেন মিরাজ। ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে জুটি গড়েন তিনি। কিন্তু ৩৩তম ওভারে রশিদের গুগলিতে কাটা পড়েন ডানহাতি ব্যাটার। ক্লিন বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে মিরাজ করেন ৩৩ বলে ২২ রান।
মিরাজের বিদায়ে বাংলাদেশ হারায় তৃতীয় উইকেট। স্কোর ৩৪ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫৬ রান।
শান্তর হাফসেঞ্চুরি
প্রথম ওয়ানডেতে খুব কাছে গিয়েও মাইলফলকটা স্পর্শ করা হয়নি নাজমুল হোসেন শান্তর। আউট হয়েছিলেন ৪৭ রানে। এবার আর ভুল করেননি বাঁহাতি ব্যাটার। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিনি।
শান্ত পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি। ৭৫ বলে হাফসেঞ্চুরির দেখা পান শান্ত।
রিভিউ নিলে টিকে যেতেন সৌম্য
দারুণ শুরুর পর আউট হয়ে গেছেন সৌম্য সরকার। রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার তিনি। প্যাভিলিয়নে ফিরে হয়তো আফসোস করছেন বাঁহাতি ওপেনার। কারণ রিভিউ নিলেই টিকে যেতেন তিনি। ইনিংসটা আরও লম্বা হতে পারতো।
দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে আউট হয়েছেন সৌম্য। ৪৯ বলে ৩৫ রান করেছেন তিনি। ২ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো তার ইনিংসটি এলবিডব্লিউতে শেষ হয়েছে। অথচ রিভিউ নিলেই বেঁচে যেতেন এই ওপেনার। কারণ রশিদ খানের বল তার প্যাডে আঘাত করলেও বল আউটসাইড লেগে পিচ করেছিল।
সৌম্য অবশ্য রিভিউ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ননস্ট্রাইকে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে আলোচনা করে রিভিউ না নিয়েই মাঠ ছেড়ে যান। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল পিচ করেছিল আউটসাইড লেগে।
সৌম্যর আউটের পর বাংলাদেশের রান ১০০ ছাড়ায়। স্কোর ৩০ ওভারে ২ উইকেটে ১৪২ রান।
শান্ত-সৌম্যর জুটি
সিরিজ বাঁচানোর লড়াই বাংলাদেশের। এই মিশনে শারজায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভালো শুরু পেয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তানের বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছেন সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তাদের ব্যাটে দ্রুত রান উঠেছে স্কোরবোর্ডে।
বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেন ওপেনার তানজিদ হাসান। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে সুবিধা করতে পারছিলেন না আফগান বোলাররা। অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি তিনি। ১৭ বলে ২২ রান করে এএম গাজানফারের বলে মোহাম্মদ নবিকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বাঁহাতি ব্যাটার।
তানজিদের সঙ্গে ইনিংস শুরু করা সৌম্যর শুরুটা ছিল মন্থর। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে হাত খুলতে থাকেন তিনি। দারুণ কিছু শটে পুরনো ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে শান্ত নেমেই চড়াও হন আফগান বোলারদের ওপর।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ফেরার ম্যাচে টস জিতে বাটিংয়ে বাংলাদেশ। শারজার উইকেটে পরে ব্যাট করা বরাবরই কঠিন। টস জেতায় সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা নাজমুল হোসেন শান্তদের।
এই ম্যাচে বাধ্যতামূলক একটি পরিবর্তন আনতেই হতো। মুশফিকুর রহিম ইনজুরিতে থাকায় তার পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পেয়েছেন জাকের আলি। ওয়ানডেতে এ উইকেটকিপার ব্যাটারের অভিষেক হয়েছে।
এছাড়া স্পিনার রিশাদ হোসেনের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন নাসুম আহদে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে নামলেন বাঁহাতি স্পিনার। এতে করে লোয়ার অর্ডারে একজন ব্যাটার কম নিয়ে খেলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। নাসুমের চেয়ে ব্যাটিং পারদর্শিতায় কিছুটা হলেও এগিয়ে রিশাদ।
বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন আনলেও আফগানিস্তান অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে নেমেছে।
বাংলাদেশ একাদশ : তানজিদ হাসান, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলি (উইকেটকিপার), মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম।
আফগানিস্তান একাদশ : সেদিকউল্লাহ আতাল, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, হাশমতউল্লাহ শহিদি (অধিনায়ক), রহমত শাহ, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবি, গুলবাদিন নাইব, রশিদ খান, এএম গাজানফার, নেঙ্গেলিয়া খারোটে, ফজলহক ফারুকী।