রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও; পুনর্গঠিত হয়েছে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট; তাতে যোগ হয়েছে কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, নির্মাতা আশফাক নিপুণ ও অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের নামও।
ছাত্র-জনতার যে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে, সেই আন্দোলনে সক্রিয় সমর্থন দিয়েছিলেন এই শিল্পীরা।
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টে পুনর্গঠিত বোর্ডে মোট সদস্য থাকছে ১৫ জন।
রোববার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আয়েশা সিদ্দিকার স্বাক্ষরে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট পুনর্গঠনের প্রজ্ঞাপন আসে। নতুন এই সদস্যরা আগামী ৩ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।
এই তালিকায় সরকারি আমলা ছাড়াও রয়েছে শিক্ষক, কবি, কথাসাহিত্যিক, সঙ্গীতশিল্পী, নির্মাতা ও অভিনেতা।
বিএনপি সমর্থন কনক চাঁপা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন সঙ্গীতাঙ্গন থেকে দূরে ছিলেন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে জানানো হয়েছিল। ভালো লেগেছে শুনে আমাকে তারা শিল্পীদের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি চেষ্টা করব আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার।”
কনকচাঁপা জানান, তিনি আগে থেকেই শিল্পী ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায়, পথশিশুদের তিনটি স্কুল ও বৃদ্ধাশ্রমে সহযোগিতা করছিলেন তিনি। এখন শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করবেন।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন অভিনেত্রী নওশাবা। তখন গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে ২১ দিন বন্দি ছিলেন তিনি। শিল্পী হিসাবে ‘কালো তালিকাভূক্ত’ও হয়েছিলেন তিনি।
এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন নওশাবা। এবার তার লক্ষ্য শিল্পীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার।
নওশাবা বললেন, “দুপুরে জেনেছি খবরটি। আমি কাজ করতে চাই ঢাকার বাইরে প্রান্তিক পর্যায়ের শিল্পীদের নিয়ে, আদিবাসীদের নিয়ে। তাদের জন্য কোনও সহযোগিতায় নিজেকে যদি নিয়োজিত করতে পারতে পারি, তাহলে ভালো লাগবে। আমার একটি মতামত বা কোনও উদ্যোগের মাধ্যমে যদি ট্রাস্ট এর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়, সেটাই প্রাপ্তি হবে।”
নির্মাতা আশফাক নিপুণ তার আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’-এ তুলে আনেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুঃশাসনের চিত্র।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিপুণ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওয়েব সিরিজটির কারণে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। প্রতিনিয়ত গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিলেন তিনি।
শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টে তার নামের অন্তর্ভূক্তিতেও খুশি সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই।
পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ, কবি নাহিদ হাসান নলেজ, অধ্যাপক ড. আবু ছালেহ মো. ওয়াদুদুর রহমান (তুহিন ওয়াদুদ), শিক্ষক সামিনা লুৎফা, কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ, কবি সাইয়েদ জামিল।
কী করবে এই ট্রাস্ট
বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০০১-এর আওতায় ২০২২ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট। এর আগে ২০২০ সালে শিল্পী কল্যাণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়।
আইনের ৭ নম্বর ধারায় ট্রাস্টের কার্যাবলির উল্লেখ আছে। যা হল, অসচ্ছল শিল্পীদের কল্যাণসাধন; শিল্পীদের কল্যাণার্থে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন; পেশাগত কাজ করতে অক্ষম-অসমর্থ শিল্পীকে আর্থিক সাহায্য; অসুস্থ শিল্পীর চিকিৎসার ব্যবস্থা; শিল্পকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য বৃত্তি; শিল্পীদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য এককালীন মঞ্জুরি, বৃত্তি বা স্টাইপেন্ড এবং দুর্ঘটনায় কোনও শিল্পীর মৃত্যু হলে পরিবারকে সাহায্য।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ট্রাস্টের মূল তহবিলে এখন জমা আছে ৩৫ কোটি টাকা।
জানা যায়, ট্রাস্ট থেকে এখন পর্যন্ত তিন দফায় শিল্পীদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অসচ্ছল শিল্পী বা সংস্কৃতিসেবীদের আর্থিক সাহায্যের জন্য ট্রাস্ট থেকে কোনো বিজ্ঞপ্তি এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। ফলে অসচ্ছল শিল্পীদের কেউ ট্রাস্ট থেকে অর্থসহায়তা পাননি।