Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

দেশে এখন সবচেয়ে স্বেচ্ছাচারী প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক : মিন্টু

আবদুল আউয়াল মিন্টু।
আবদুল আউয়াল মিন্টু।
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন দেশের সবচেয়ে স্বেচ্ছাচারী প্রতিষ্ঠান বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইস সাবেক সভাপতি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

রবিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে সংস্কারের নামে ঢালাওভাবে কোনও ব্যাংক বন্ধ না করার আহ্বানও জানান তিনি।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “দেশের সবচেয়ে স্বেচ্ছাচারী প্রতিষ্ঠান এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংক ধ্বংস করেছে। এখন তারা কিছু ব্যাংক বন্ধ করছে, আর কিছু ব্যাংকের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করছে। আমি বলব- এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হচ্ছে।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত ‘ব্যবসার পরিবেশ সংস্কার : অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এজেন্ডা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য রাখছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এখন দরকার সব ধরনের স্বেচ্ছাচারী নীতিমালা দূর করা। এসব নীতিমালার কারণে যেসব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে এই নীতিমালা সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত করা দরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “টাকা ছাপালে মূল্যস্ফীতি বাড়বে- এটা সঠিক নয়। কারণ, প্রচলনে থাকা মুদ্রার পরিমাণ যেটা বলা হচ্ছে, সেই পরিমাণ মুদ্রা বাজারে নেই।

“যখনই কারও বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে, এক কোটি, পাঁচ কোটি, দশ কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এই টাকাগুলো বাজারে কোনও প্রভাব ফেলছিল না। তাছাড়া বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ভারতের ১০ কিলোমিটার ভেতরে গেলে সেখানেও বাংলাদেশি টাকা চলছে।”

কত টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়লে তা মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে না- সে বিষয়ে কোনও সমীক্ষা আছে কি না, সে প্রশ্ন তোলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

এসময় দুর্বল ব্যাংক বন্ধ করার বিষয়ে ঢালাও মন্তব্য না করার অনুরোধ করেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।

তিনি বলেন, “এখানে কেউ আছেন যে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি একটি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত। ২০০৬ সালে আমি সেই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। আজ দেশের ব্যাংকগুলোর যে দুরবস্থা হয়েছে তার জন্য কে দায়ী- এই প্রশ্ন কেউ করছে না। ফলে এই ব্যাংকগুলো বন্ধের বিষয়ে ঢালাও মন্তব্যও করা ঠিক হবে না।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এসময় ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা করার আগে রাজনীতিতে সংস্কার আনার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “এখন সবাই বলছে সংস্কার, সংস্কার, সংস্কার। কিন্তু এই সংস্কার যারা করবে অর্থাৎ সরকার এবং এর ফলে যারা উপকৃত হবেন তাদের সঙ্গে কোনও সংযোগ আছে?”

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “সংস্কার এমন একটি বিষয়, যা নিজে থেকেই সংস্কার করতে করতে সামনে এগিয়ে যায়। কিন্তু আমরা এমন একটি দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করতে পারি? যা ইতোমধ্যে ঘটেছে তার থেকে বেশি প্রত্যাশার কিছু নেই।

“এই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা এমন একটি গোষ্ঠী তৈরি করেছিল যারা কেবল নিজেদের স্বার্থই দেখত। আপনারা যদি কোনও সংস্কার করতে চান, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উন্নতি চান, তাহলে প্রথমে সংস্কার আনতে হবে রাজনীতিতে।”

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, “প্রয়োজনে বিজনেস রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত স্বার্থের কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আমরা সরকারের কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছি। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।”

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী ২ বছর দেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগাবে মূল্যস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বায়ু-পানি-মাটি দূষণ, আর্থিক মন্দা-শ্লথগতি, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জ্বালানি সংকটসহ ৩২টি সমস্যা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে টেনে তুলতে ‘রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন’ গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের লক্ষ্য থেকে সরকার সরে আসছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা ৫ অথবা ১০টি হবে।

অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। এসময় তারা ব্যবসা চালুর শুরু থেকে বিভিন্ন ধাপে সরকারি দপ্তরে ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগ করেন। কর পরিশোধের ক্ষেত্রেও ঘুষ দেওয়ার ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

দুর্নীতি ও ঘুষ চক্র থেকে মুক্তি পেতে এনবিআরের প্রতিটি বিভাগের জন্য বিশেষ পলিসি নিয়ে কাজ করার তাগিদ দেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকিং খাত সংস্কারে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদও দেন তারা।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, “আমাদের মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলা করতে আগে থেকে সতর্ক হতে হবে।”

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। ব্যবসা বাড়াতে সরকারি দপ্তরগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।”

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, “দুর্নীতি ও ঘুষ চক্র থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে হবে। ডিজিটাল করাসহ এনবিআরের শুল্ক, ভ্যাটসহ সব বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা নীতি গ্রহণ করতে পারলে দুর্নীতি অর্ধেক কমে আসবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত