Beta
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫

বিশ্বকে ‘আশার গল্প শোনাতে পারে’ বাংলাদেশ

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বুধবার বক্তব্য দেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বুধবার বক্তব্য দেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক।
[publishpress_authors_box]

সব রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়সহ সবার প্রত্যয় জোরালো থাকলে জটিল পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ সারাবিশ্বকে আশার গল্প শোনাতে পারে বলে মনে করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক।

তিনি বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে সবার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা উচিৎ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে গত ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন নিয়ে বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেই আলোচনা সভায় ভলকার টুর্ক এসব কথা বলেন।

আলোচনার শুরুতে তিনি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে পরে তা নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর বক্তব্য দেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থপতি ফারহানা শারমিন (ইনু) ও গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত।

আলোচনায় গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার আন্দোলন দমনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও দলটির সদস্যদের নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার কথা উল্লেখ করেন ভলকার টুর্ক।  

গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বাংলাদেশের আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করা হয়েছে। তবে এসব মামলায় সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।”

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারে গুরুত্বারোপ করে হাই কমিশনার বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বড় সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের।

“ধর্মীয় বা জাতিগত বিষয়ে নিজেদের মধ্যে যত মতানৈক্যই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ একটি দেশ। সবারই নাগরিকত্ব বাংলাদেশি। আমার মনে হয়, সংস্কার চেষ্টার মাধ্যমে এখন এ চেষ্টাই চলছে। আমাদের সবাইকে সংস্কার কার্যক্রমকে সহযোগিতা করতে হবে।”

এ প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় মানবাধিকারকে সংযুক্ত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ভলকার টুর্ক বলেন, “বাংলাদেশিদের জন্য বিরল সুযোগ এসেছে, তারা যে গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়েরই হোন না কেন। এটাই মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ থেকে বড় আশার দিক।

“বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের চ্যালেঞ্জটা বেশ কঠিন। তবে সব রাজনৈতিক দল ও সম্প্রদায়সহ সবার প্রত্যয় জোরালো থাকলে জটিল পরিস্থিতিতেও সারা বিশ্বকে বিরাট আশাবাদের গল্প শোনানোর সুযোগ রয়েছে দেশটির।”

এরপর বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “জুলাই-আগস্ট গণহত্যার নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছ বিচারিক প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি এরই মধ্যে সংশোধন করা হয়েছে।”

আইন উপদেষ্টার বক্তব্য শেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বলপ্রয়োগের তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।

এরপর জুলাই-আগস্টে আহত ব্যক্তিদের সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবী ও স্থপতি ফারহানা শারমিন সে সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে আহত মানুষদের জন্য অপরিহার্য বিষয়টি হচ্ছে, শারীরিকভাবে তাদের সুস্থ করে তোলা। তাদের যথাযথভাবে চিকিৎসা নিশ্চিত করা ও অপরাধীদের বিচার করা দুটিই পাশাপাশি চালিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।”

আলোচনার একপর্যায়ে মীর মাহমুদুর রহমান ভাই হত্যার বিচারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, “যারা ট্রিগারে আঙুল চেপেছে শুধু তারাই নয়, যারা গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে, তাদেরও বিচার করতে হবে।”

গত ১২ জানুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিগত সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ছিল।

ক্ষমতায় থাকার জন্য তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার ক্রমাগত নৃশংস পদক্ষেপ নিয়ে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে।

সে সময় প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই গুলিতে প্রাণ হারান।

তথ্যসূত্র : বাসস

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত